কবুতরের সাথে যোগাযোগ মাধ্যম টেলিপ্যাথি (Make a Relation with your Pigeons via Telepathy system) Written By Kf Sohel Rabbi

Make a Relation with your Pigeons via Telepathy system

টেলিপ্যাথি শব্দটা শুনে হয়তো অনেকেই ভ্রু কুচকে ফেলেছেন আর ভাবছেন যে এটার সাথে কবুতরের কি সম্পর্ক?

অনেকেই হয়তো এরি মধ্যে মনে মনে সমালচনার ঝুড়ি সাজিয়ে ফেলেছেন। কিন্তু বিশ্বাস করুন আর নাই করুন, এটা একটা খুবই কার্যকরী প্রক্রিয়া যা হয়তো পরবর্তী আলোচনার মাধ্যমে এই ব্যাপারটি আপনাদের কাছে পরিস্কার হয়ে যাবে।

যোগাযোগ মাধ্যমে একটি অতিপ্রাকৃত ক্ষমতার ব্যায়াম বা এর মত কিছু প্রক্রিয়া। অন্য ভাবে বলা যায় যে, উপলব্ধি সহ অন্য কিছু উপায়ে মনের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন করা।

এছাড়াও অনুভূতি , ইচ্ছা , আবেগ চিন্তার স্থানান্তরণ দ্বারা এই ধরনের যোগাযোগ স্থাপন করা সম্ভব।

“টেলিপ্যাথি” শব্দটির উদ্ভূত হয়েছে “টেলি” যার অর্থ ” দূরত্ব ” এবং “প্যাথি” যার অর্থ “অনুভূতি” শব্দ থেকে, সুতরাং টেলিপ্যাথি আসলে একটি দূরত্ব থেকে পাঁচটি পরিচিত ইন্দ্রিয় ব্যবহার না করে অনুভূতি সম্প্রসারিত করার জন্য পৃথক দুটি মনের মধ্যে যোগাযোগ কে , টেলিপ্যাথি বলে।

আজ সকালে আপনি কোন আপন জনের কথা চিন্তা করছেন! সে হয়তো আপনাকে ফোন করল। আপনি যখন কোন আপন জনের কথা চিন্তা করছেন, ঠিক সেই সময় সেও আপনার কথা একই সময়ে চিন্তা করছেন। যেমন আপনি আপনার পোষা প্রাণী টিকে কোন কিছু বলছেন, সে কিন্তু আপনার কথা বুঝছে না কিন্তু আপনার অনুভুতি কে বুঝতে পারছে আর তাই তার কাছে আপনার নির্দেশ টা মানা সহজ হচ্ছে। একটি গরু যে কিনা জীবনেও বাঘ দেখে নাই সে যদি কোন দিন বাঘ দেখে তাহলে সে কিন্তু দাড়িয়ে থাকবে না। কিভাবে শিখল সে এসব? আপনি হয়তো খেয়াল করবেন এ রকম অনেক ঘটনা প্রাণী ও মানুষের ক্ষেত্রে ঘটে থাকে যা কিনা, চিন্তা করলে আশ্চর্য হতে হয়। এই প্রক্রিয়াটা শুধু মাত্র ২ জন ঘনিষ্ঠ মনের মধ্যে হয়, আপনার যদি ঘনিষ্ঠতা না থাকে তাহলে আপনি এই মধ্যম সম্পর্কে কখনই জানতে পারবেন না। আর এটি আপনার কাছে অজানায় রয়ে যাবে।

যেকোনো খামারে সেটা পাখিই হোক বা মুরগি হোক বা গরুই হোক তাদের রক্ষনা বেক্ষন এর জন্য একজন নির্দিষ্ট লোক থাকে। আর এই লোক যদি প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হয় তাহলে সেই পাখি বা কবুতর ডিম কম দিবে, সেই গরু দুধ কম দিবে, কারন কোন প্রাণী নতুন কাওকে তার খামারে পছন্দ করে না। যিনি নিয়মিত খামার পরিচর্যা করেন তিনি যখন খামারে আসেন তখন কবুতর বা প্রাণী গুলো মধ্যে এক ধরনের প্রান চাঞ্চল্য আসে। এটা শুধুই তার সাথে সম্পর্ক বা সেই আনুভুতির কারনে। আপনি যদি আরেকটি ব্যাপার খেয়াল করেন যে, আপনি একটা মানুষ সম্পর্কে খারাপ ধারনা করছেন, আপনি কিন্তু ধরেই নিতে পারেন সেই জন্য আপনার সম্পর্কে সেই একই ধারনা পোষণ করছে। আর প্রানিজগতে এটার ব্যাপকতা আর বেশী।

অনেকেই আছেন অনেক বছর ধরে কবুতর পালন করেও তাদের সাথে কোন প্রকার সম্পর্ক তৈরি করতে ব্যর্থ হন। এই ধরনের লোকজন আসলেই কবুতর পছন্দ করেন না। তাদের শুধুই ব্যাবসাইক চিন্তা থেকেই কবুতর পালন শুরু। অনেক মানুষ জন আছেন তারা নানা রোগের সমাধান চান কিন্তু ৯০% খামারি ঠিক মত খেয়াল করেন না বা করার সময় পান না।

যেমন একজন ফোন দিয়ে জিজ্ঞাস করলেন যে তার কবুতর ঝিমাচ্ছে, কেন? কারন জানেন না! খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু যখন জানতে চাওয়া হল পায়খানা কেমন? তখন উনি ঠিকমত বলতে পারলেন না। আবার তিনি দেখে ফোন দিলেন। বললেন সাদা। প্রশ্ন করা হল সাদা ও সবুজ নাকি শুধুই সাদা? আবার তিনি দেখলেন তারপরি জানাতে পারলেন যে না সাদা ও সবুজ। এটাই হল আমাদের কবুতর পালার সাধারন চিত্র। অনেকেই আছেন কর্মচারী রেখে কবুতর পালেন। কোন দোষের না কারন সময় স্বল্পতার কারনে আপনি আপনার লোকের সাহায্য নিতেই পারেন। কিন্তু তাই বলে আপনি তার সাথে কোন সম্পর্ক তৈরি করতে পারবেন না এমন কোন কথা নাই। দিনে অন্তত একবার হলেও আপানার খামারের খোজ নিতে পারেন। আর এভাবেই সম্পর্ক তৈরি করতে পারেন। তবে একটা ব্যাপার নিজে কবুতর পালা আর লোক দিয়ে পালার মধ্যে এমনি পার্থক্য যেমন লবন ছাড়া তরকারি যেটা হয়তো খাওয়া যায় কিন্তু কোন স্বাদ পাওয়া যায় না। যদিও সবাই কে এক কাতারে ফেলা যাবে না। সে যাই হোক এখন আসুন যে উদ্দেশ্য নিয়ে এটা লিখা সেটা কিভাবে উন্নত করা যায়। এরই কিছু প্রক্রিয়া নিন্মে দিয়া হলঃ

 

১) আপনি ও আপনার প্রাণীর মধ্যে সম্পর্কের উন্নয়নঃ

আপনি প্রতিদিন আপনার খামারে কমপক্ষে ১৫ মিন সময় কাটান, আর এই সময় আপনি আপনার কবুতরের আচরন খেয়াল করুন। তাদের সাথে বিভিন্ন শব্দ করে আপনার আবেগ প্রকাশ করুন। সম্ভব হলে খাবার বা পানি দিতে পারলে আর ভাল। কিন্তু এটা করতে গিয়ে যেমন আপনি তাদের বিরক্তির উদ্রেগ না করেন।

 

২) বিশ্বাসঃ

এই প্রক্রিয়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল যে প্রাণীটিকে এই বিশ্বাস বা আশ্বাস প্রদান করা বা শারীরিক/অনুভুতি প্রকাশ করা যে আপনার দ্বারা তার কোন ক্ষতি হবে না। আর এটা করতে আপনাকে ডিম বা বাচ্চা সরানোর ব্যাপারে একটু সতর্ক থাকতে হবে। তাই তাদের অনর্থক ধরা বা তাদের বিরক্ত করা থেকে সতর্ক থাকতে হবে।

 

৩) শারীরিক ও মানসিক অবস্থা বিবেচনাঃ

আপনি আপনার খামারে প্রবেশের আগে লক্ষ করুন যে আপনি শারীরিক ও মানসিক ভাবে ভাল ও সুস্থ আছেন। মানে এমন যেন না হয় যে, আমি জ্বর বা অসুখ নিয়ে খামারে প্রবেশ করলেন, বা কার সঙ্গে ঝগড়া করে খামারে ঢুকলেন। দিয়ে জোরে জোরে কথা বা শব্দ করলেন বা ধুমধাম করে খাবার ও পানি দিলেন তাহলে আপনার উদ্দেশ্য ব্যাহত হবে। আর আপনার শারীরিক অসুখ ও হয়ত আপনার খামারে বিস্তার লাভ করতে পারে। আপনি ব্যাবহার এমন ভাবে দেখতে পারেন যে একটা টিম এর ক্যাপ্টেন খেলতেছেন কিন্তু সে তার দল কে উৎসাহিত করার বদলে মুখ শুকনা করে থাকে তবে সে ব্যাপারটা দলের সবার মধ্যে এক সময় সংক্রমিত হবে। বিশেষ করে প্রাণীদের মধ্যে ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় এর ক্ষেত্র অনেক প্রবল। ফলে আপনি তাদের চোখকে ফাকি দিতে পারবেন না। যেমন আপনি যদি একটা পরীক্ষা করেন আপনি কোন জিনিষ নিয়ে খামারে প্রবেশ করলেন। আর জিনিষটা হটাত করে পিছনে লুকালেন। খেয়াল করবেন আপনার খামারের কবুতর গুলো আপনি যা লুকালেন সেতাই দেখার চেষ্টা করছেন যদি দেখে না থাকে।

৪) দূরদর্শিতা বা কল্পনাঃ

আপনি যদি একজন সফল খামারি হতে চান তাহলে আপনাকে অবশ্যয় দূরদর্শি হতে হবে বা আপনার কল্পনার জগত কে একটু উন্নত করতে হবে। যেমন আপনি যখন খামারে যান তখন আপনাকে দেখে আপনার কবুতর হয় পাখা ঝাঁপটাবে অথবা খাচার সিখে উঠার চেষ্টা করবে। প্রথমটা তার খুসির বহিঃপ্রকাশ আর দ্বিতীয়টা তার প্রয়োজনীয়তার প্রকাশ। এর মানে হয় সে কিছু চাচ্ছে। আর আপনাকে এটা খুজে বের করতে হবে। আর আপনি যদি বিচক্ষণ হন তাহলে আপনি নতুন বা পুরাতন যেই হন না কেন আপনি এই কাজে(মাধ্যমে) একটু এগিয়ে থাকবেন। যেমন আমি আমার খামারে যখন যাই তখন সাধারণত পাখা ঝাপটায় আর যদি কিছু দরকার হয় তারা এটা করে যেমন গ্রিট দিতে হবে বা পানি শেষ হয়ে গেছে বা খাবার নাই ইত্যাদি। আর এটা আমি অনেক বারই খেয়াল করেছি।

৫) মাধ্যমঃ

আপনি যদি আপনার কবুতরের সাথে সম্পর্ক উন্নয়ন করতে চান, তাহলে আপনাকে আপনার মাধ্যম টা আপনাকেই নির্ণয় করতে হবে।

কিভাবে?

যেমন আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে যে আপনার কবুতর কি পছন্দ করছে আর কি অপছন্দ করছে। হয় সে ডিম পাড়ার সময় কার সঙ্গ পছন্দ করে না। আর নর টা নানা ভাবে আপনাকে বুঝানর চেষ্টা করে। তাই সেই মাধ্যম টা নির্বাচন করাটা আপনার দায়িত্ব।

৬) ধৈর্য ধারনঃ

যখন আপনি একজন কবুতর খামারি  তখন আপনাকে যে গুন অর্জন করতে হবে তা হল ধৈর্য, ধৈর্য ছাড়া এই পদ্ধতির লক্ষ অর্জন সম্ভব না। ঔষধ প্রয়োগ ছাড়াও কবুতরের আচার আচারণ দীর্ঘ সময় ধরে লক্ষ করাও এর আরেক ধাপ।

পরিশেষে আপনি যাই করেন না কেন এই পদ্ধতি তখনি সম্ভব যখন আপনার কবুতর সুস্থ ও সবল থাকবে। আর এটা দেখার দায়িত্ব আপনারই আর এরই পথ ধরে আপনি কবুতরকে অনর্থক ধরা, বা তাদের কে পরীক্ষা করা বা মাস্তি করার সময় সামনে যাওয়া ইত্যাদি করেন তাহলে এই পদ্ধতির অন্তরায় হয়ে যাবে।

লেখক : সোহেল রাবি ভাই