পাখি বা কবুতরের ঠোঁট, শিঙ বা আঙুলের আঙ্গুলের নখ, চুল ইত্যাদি গঠনকারী এক ধরনের প্রোটিন বা কোষ দিয়ে তৈরি হয়। শিং বা আঙুলের নখের মত, ঠোঁট দিনে দিনে বেড়ে চলে। আর এটা পাখি বা কবুতরের প্রজাতির উপর নির্ভরশীল। প্রজাতি ভেদে কিছু একটি পাখি বা কবুতরের ঠোঁট বা নখ এক থেকে তিন ইঞ্চি বৃদ্ধি পেতে পারে প্রতি বছর। ঠোঁটের সংযোগ অংশ রক্ত সরবরাহকারী কোষ দিয়ে তৈরি এবং শেষাঅংশ নখের মত সেখানে কোষ থাকে না ফলে অনুভূতি থাকে না। ঠোঁটের সমস্যা ৩ ভাগে ভাগ করা যেতে পারে
(ক) অস্বাভাবিক বা শারীরিক বা জিনগত সমস্যা।
(খ) রোগের সংক্রমণ বা জীবাণু ঘটিত সমস্যা এবং
(গ) দুর্ঘটনা বা আঘাত ও বৈদ্যতিক শক জনিত সমস্যা।
(ক)অস্বাভাবিকতার দিক দিয়ে ঠোঁট কে ৩ ভাগে ভাগ করা যায়ঃ
১) প্রবৃদ্ধ ঠোঁট ২) কাঁচি ঠোঁট ও ৩) বাকান বা তোতাপাখির মত ঠোঁট ।
১) প্রবৃদ্ধ ঠোঁট:
সাধারনত উপরের ঠোঁট নিচের ঠোঁটের থেকে বা নিচের ঠোঁট উপরের ঠোঁট থেকে অস্বাভাবিক ভাবে লক লকিয়ে বেড়ে ওঠে। এ ধরনের অস্বাভাবিকতার জন্য নিয়মিত ঠোঁট ছাঁটাই বা পরিচর্যার প্রয়োজন হয়। প্রবৃদ্ধ ঠোঁট সাধারণত ভয় বা স্ট্রেস, পুষ্টির ভারসাম্যহীনতা, বিভিন্ন ভাইরাসের সংক্রমণ, লিভারের রোগ সহ বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যার ফলে হতে পারে।
২) কাঁচি ঠোঁট:
কাঁচি ঠোঁট উপরের চোয়াল থেকে নিচের চোয়ালের বিচ্যুতির ফলে হয়। এটা কৃত্রিম অণ্ডস্ফুটন, জেনেটিক্স বা ভুল খাওয়ানো কৌশল ও তাপমাত্রা দ্বারা সৃষ্ট মনে করা হয়। অন্যান্য সম্ভাব্য কারণ ক্যালসিয়াম+ডি অভাব, স্ট্রেস বা ভাইরাল বা mycobacterial সংক্রমণ থেকে ঘটে থাকে।
৩) বাকান বা তোতাপাখির মত ঠোঁটঃ
বাকান বা তোতাপাখির মত ঠোঁট সাধারণত নিচের চোয়াল বা ঠোঁটের থেকে উপরের চোয়াল বা ঠোঁটের প্রবৃদ্ধি বা উন্নয়ন অস্বাভাবিকতা সবচেয়ে বেশি হলে এ ধরনের সমস্যা দেখা যায়। দেখতে অনেকটা cockatoos বা তোতা পাখির ঠোঁটের মত হয়ে যায়। এই অবস্থার কারণ অজানা তবে জেনেটিক্স, অণ্ডস্ফুটন সমস্যা এবং নানা ধরনের ভুল খাওয়ানো কৌশল অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।
(খ) রোগের সংক্রমণ বা জীবাণু ঘটিত সমস্যাঃ
রোগের সংক্রমণ বা জীবাণু ঘটিত সমস্যা মূলত প্রধান সমস্যা হিসাবে দেখা হয়। কারণ প্রথমে উল্লেখিত সমস্যা থেকে উত্তোরন করা যেতে পারে। কিন্তু এই ধরনের সমস্যা পাখি বা কবুতরের জীবন সংশয়ের কারন হতে পারে। এই অবস্থায় কবুতর তার উপরের বা নিচের ঠোঁট খুলে পড়ে যেতে পারে বা উপর নিচ দুটাই পড়ে যেতে পারে, ভেঙ্গে যেতে পারে বা রক্ত ক্ষরণ হতে পারে বা নাকের আবৃত চামড়া নষ্ট হয়ে যেতে পারে বা ঠোঁটের কোন অংশে গর্ত হয়ে যেতে পারে বা অর্ধেক ভেঙ্গে যেতে পারে বা উপর বা নিচের আবৃত নখ সদৃশ কোষ আবরণী নষ্ট হয়ে রক্ত সরবরাহকারী কোষ অবশিষ্ট থাকতে পারে। ফলে কবুতর জীবমৃত্যুর মাঝে অবস্থান করতে থাকে। এ অবস্থায় পাখি বা কবুতর কে সারাজীবন ধরে খাওয়াতে হয়। তার ব্রিডিং ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়। ফলে খামারের বোঝা হিসাবে বেচে থাকে। এটি সাধারণত পক্স, ক্যাঙ্কার, ডিপথেরিয়া, ভাইরাল বা mycobacterial বা প্রোটোজোয়া সংক্রমণ থেকে ঘটে থাকে।
(গ) দুর্ঘটনা বা আঘাত ও বৈদ্যতিক শক জনিত সমস্যাঃ
যেকোনো ধরনের দুর্ঘটনা বা আঘাত ও বৈদ্যতিক শক জনিত সমস্যা হতে পারে। যেমনঃ শিকারির গুলি, উপর থেকে পড়ে যাওয়া, জোরে কোথাও আঘাত লাগা বা বৈদ্যতিক শক লেগে ঠোঁট মুড়মুড়ে হয়ে যায়। ফলে একটু আঘাত লাগার ফলেই ঠোঁটের ক্ষতি হতে পারে বা যেকোনো এক অংশ খুলে পড়ে যেতে পারে। এছাড়াও মারা মারি, বা উড়তে গিয়ে নিচে পড়ে যাওয়া, খাঁচার চিপাতে ঠোঁট আঁটকে যাওয়া, জোর করে ধরে বা ঠোঁটে চাপ দিয়ে বা প্রেসার দিয়ে ঠোঁট খোলার চেষ্টা কালে ঠোঁটের গোঁড়া বা টিস্যুতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ইত্যাদি কারনে এই ধরনের সমস্যা হতে পারে।
*সুস্থ ও সবল ঠোঁটের ধরনঃ
আপনি কিভাবে বুঝবেন যে আপনার পাখি বা কবুতরের ঠোঁট সুস্থ সুস্থ আছে? একটি পাখি বা কবুতর সুস্থ ঠোঁট থাকলে সে খেতে, লাফালাফি করতে, বা মারামারি করতে বা গা চুলকাতে এটি স্বাভাবিক ভাবে ব্যবহার করবে। আর যদি কোন কারনে এতে সমস্যা থাকে তাহলে সে তার ঠোঁট ব্যাবহার করা থেকে এড়িয়ে যাবে বা বিরত থাকবে। কারণ তার ঠোঁটের সমস্যা তাকে নানা উপায় অস্বস্তি সৃষ্টি করে। আপনার কবুতরের ঠোঁট যে সুস্থ তার আরও কিছু লক্ষণ হল:
১) মসৃণ, প্রতিসম চেহারা।
২) কোন পিলিং বা মরা চামড়া বা অস্বাভাবিক অঙ্গবিন্যাস বা ঠোঁটে খুস্কির মত কিছু থাকবে না। যদিও অনেক সময় গা চুলকানোর জন্য এ ধরনের খুস্কি ঠোঁটে দেখা যায়।
৩) গোলাপি বা হালকা লাল ঠোঁট, সাদা বা ফ্যাকাসে না বা কোন discolored বা স্পট ঠোঁটের উপর থাকবে না ।
৪) যথাযথ ঠোঁটের দৈর্ঘ্য অর্থাৎ উপরের ঠোঁট এবং নিম্ন ঠোঁটের সঠিক প্রান্তিককরণ বা সমান্তরাল থাকবে। যদিও উপরের ঠোঁট একটু বেড়ে এসে নিচের ঠোঁটের সাথে মিশে যাবে ইত্যাদি।
বিভিন্ন রোগের কারনে ক্ষতিগ্রস্ত ঠোটঃ
১) পক্সঃ পক্স কবুতরের ঠোঁটের জন্য অন্যতম সমস্যা, আর সেটা যদি হয় ঠোঁটের উপর তাহলেতো কথাই নেই। ঠোটে পক্স হলে আর সেটা যদি তাড়াতাড়ি চিকিৎসা করা না হয়। তাহলে সংক্রমণ হয়ে গর্ত সৃষ্টি হয় বা ঠোঁটে পচন ধরে। ফলে উপরের বা নিচের পাটি খুলে পড়ে যায় বা ঠোঁটের মাঝখানে গর্ত হয় বা নাকের ফুটার উপরের চামড়া পড়ে যায়। বা দেরিতে চিকিৎসা করলে সংক্রমনের ফলে ঠোঁট বেকে যেতে পারে।
২) ক্যাঙ্কারঃ হলে মুখের ভিতরে সংক্রমন হয়ে ঠোঁট পড়ে যাতে পারে বা দেরিতে চিকিৎসা শুরু করলে ঠোঁটে পচন ধরে ফলে ঠোঁট বেকে যেতে পারে। আমার ধারনা অনেক খামারির এই ধরনের অভিজ্ঞতা এখনও বহন করছেন।
৩) ডিপথেরিয়াঃ এই রোগের কারনেও মুখের ভিতর প্রথমে লালা ও পরবর্তীতে পচন শুরু হয়ে ঠোঁট কাল হয়ে বেকে যায়। এমন কি সংক্রমনের ফলে পড়েও যেতে পারে।
৪) সাধারন ঠাণ্ডাঃ অনেক সময় সাধারন ঠাণ্ডা জনিত সমস্যা তে ঠোঁট বেকে যায়।
৫) মাইট/পোকাঃ কিছু ধরনের মারাত্মক জীবাণু বহণকারি পোকার আক্রমনে বা ভাইরাল বা mycobacterial বা প্রোটোজোয়া সংক্রমণ থেকে ঠোঁট বেকে যেতে পারে বা পড়ে যেতে পারে।
৬) সুষম খাদ্যের অভাবঃ সুষম খাদ্য সংকট একটি বড় সমস্যা যেকোনো রোগের জন্য বিশেষ করে ঠোঁট বেঁকে যেতে পারে।
৭) ভিটামিন ও মিনারেলস এর অভাবঃ ভিটামিন ও মিনারেলসের অভাবে শারীরিক নান সমস্যার পাশাপাশি ঠোঁট বাকা বা ভঙ্গুর বা মুড়মুড়ে হয়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ। বিশেষ করে বি কমপ্লেক্স, ক্যালসিয়াম, ডি, এ, সি ইত্যাদি অন্যতম।
৮) রোদের অভাবঃ স্যাঁতসেঁতে খামার বা খাঁচা বা রোদের অভাবে বা আলো বাতাসের অভাবে ঠোঁট বেঁকে যেতে পারে।
৯) অতিরিক্ত ও উচ্চ মাত্রার অ্যান্টিবায়টিক প্রয়োগঃ আমরা অনেক সময় না জেনেই উচ্চমাত্রার অ্যান্টিবায়টিক বেশী ব্যাবহার করি সময় জ্ঞান না নিয়েই আর এ ক্ষেত্রে এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হিসাবে ঠোট বেকে যেতে পারে।
১০) স্ট্রেসঃ কবুতর যদি বেশীদিন স্ট্রেস বা কোন ধরনের কোন ভয় পায় তাহলে এমন সমস্যা হতে পারে। কবুতরের স্ট্রেস একটা মারাত্মক সমস্যা আর এখান থেকে নানা ধরনের রোগের সুত্রপাত হয়ে থাকে। স্ট্রেস নিয়ে অন্য একটি পোস্টে এ রোগ নিয়ে বিস্তারিত দেয়া আছে।
১১) লিভারঃ কবুতরের নানা ধরনের রোগের ক্ষেত্রে দুইটি সংক্রমণ বেশী দায়ী আর এ থেকেই প্রধান সমস্যা হয় আর তা হল লিভার ও কিডনি। এই দুইটি অঙ্গের সমস্যার কারনে ঠোঁট বেকে বা ভঙ্গুর হয়ে যেতে পারে।
১২) চর্বিঃ যদি বীজ জাতীয় খাবার বেশী দেয়া হয় তাহলে সেই সব বীজ গুলো চর্বিতে রূপান্তরিত হয়ে এমন সমস্যা দেখা দিতে পারে। তবে এ ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে যেন পর্যাপ্ত কবুতরের গ্রিট সরবরাহ করা হয়।
১৩) লবনের ঘাটতিঃ লবনের ঘাটতির কারনে কবুতরের নানা সমস্যা হয়ে থাকে, তার মধ্যে শারীরিক বৃদ্ধি ব্যাহত, পাতলা পায়খানা, কাপোনি রোগ, পা বা পাখা প্যারালাইসিস, ঠোঁট বাকা ইত্যাদি।
১৪) মলটিং বা পালক মোচনঃ মলটিং কবুতর ও পাখিদের একটি প্রাকৃতিক অবস্থা। প্রতিবছর এটি ঘটে থাকে। এ সময় কবুতর খাবার কম খায় ও নানা শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। তাই এ সময় তরল জাতীয়, ভিটামিন মিনারেলস ও লবন যুক্ত খাবার সরবরাহ করতে হয়। তবে যদি দীর্ঘ সময় মলটিং হলে, আর সেক্ষেত্রে যদি যথাযথ যত্ন না নেয়া হয় তাহলে ঠোঁট বেকে যেতে পারে। এই সময় কবুতর প্রচণ্ড রকমের স্ট্রেস ও নার্ভাস থাকে।
১৫) দীর্ঘদিন অসুস্থ রোগে ভুগতে থাকাঃ কোন কবুতর যদি দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকে বা রোগে ভুগতে থাকে। আর সেক্ষেত্রে যদি সময়মত সঠিক চিকিৎসা দেয়া না হয় তাহলে শারীরিক নানা সমস্যাসহ এ সমস্যা দেখা দিতে পারে।
১৬) ভারি কিছু ঠোঁটের উপর পড়লেঃ অনেক সময় লোহা বা কাঠ বা ভারি কিছু ঠোঁটের বা শরীরের উপর পড়ে ঠোঁটের নরম গোঁড়ার টিস্যুতে আঘাত লেগে ঠোঁট খুলে যেতে পারে বা ছেঁচে যেতে পারে।
***ঠোঁটের যত্নঃ
ঠোঁটের যত্ন পাখির সামগ্রিক স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ঠোঁট পুষ্টির জন্য আমরাদের খেয়াল রাখা প্রয়োজন যে সব ধরনের পুষ্টি বা সুষম খাদ্য দেয়া হচ্ছে। প্রথম দিকে কোনো সমস্যা সনাক্ত করে ঠোঁটের স্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়াও কিছু বাড়তি যত্ন এর অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।
১) দৈনিক আপনার পাখি স্বাস্থ্য পরিক্ষা।
২) ঠোঁটের ফাটল, অতিবৃদ্ধি, বা বিবর্ণতা দিখা দিলে ব্যাবস্থা নেয়া।
৩) আপনার পাখি বা কবুতরের ঠোঁট অসমান ভাবে বাড়ছে সন্দেহ দেখা দিলে আপনি এর ব্যাবস্থা নিন। যেমন যকৃত বা পুষ্টির বিষয় হিসাবে সমস্যা চিহ্নিত হতে পারে।
৪) অসুস্থ পাখি ঠোঁট-ছাঁটার ক্ষেত্রে তাড়াহুড়া করবেন না। ঠোঁট ছাঁটাই জন্য শুধুমাত্র ভাল প্রশিক্ষিত কর্মী ব্যবহার করুন। যাদের এ ব্যাপারে অভিজ্ঞতা আছে। ঠোঁট ছাঁটাই পর ইলেক্ট্রোলাইট এবং ভিটামিন কে ও মাল্টি ভিটামিন ৩-৪ দিন ব্যবহার করুন।
৫) ঠোঁট ছাঁটাই পর কয়েক দিনের জন্য সর্বোচ্চ পর্যায়ে সুষম খাবার সরবরাহ রাখুন।
৬) কাঁচি ঠোঁট চিকিৎসার শর্ত হিসাবে এর তীব্রতা এবং কবুতরের বয়সের ওপর নির্ভর করে। এক্ষেত্রে আঙুলের চাপ দিয়ে বেশ কয়েকবার দৈনিক খাওয়ানোর সময় উপরের ঠোঁট ও নিচের ঠোঁট মিলানোর জন্য চেষ্টা বা আকর্ষণ করতে হবে। এক্ষেত্রে এক টুকরা কাপড় ব্যবহার করা যেতে পারে।
৭) জোর করে খাওয়ানোর ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে যেন ঠোঁটের উপর চাপ না পড়ে বা ডানে বায়ে চাপ না লাগে এক্ষেত্রে ঠোঁট বেঁকে যাবার সম্ভাবনা থেকে যায়। তাই খাওয়ানোর সময় জোর বা চাপ প্রয়োগ করা যাবে না।
৮) ঠোঁটের সমস্যার সময় কবুতরের শরীরে খাবারের অনেক ঘাটতি রয়ে যায়। এ কারনে মৃত্যুও ঘটতে পারে। তাই এদের খাবারের ব্যাপারটি নিশ্চিত করতে হবে।
৯) ঠোঁট যদি কোন কারনে ভঙ্গুর বা মুড়মুড়ে হয়ে গেছে একটু আঘাতেই কনা ভেঙ্গে যাচ্ছে। সেক্ষেত্রে ভেসলিন বা অলিভ অয়েল ঠোঁটে নিয়মিত লাগানো যেতে পারে। এটি সাধারন ভাবেও লাগানো যেতে পারে।
কবুতরের ঠোঁটের সমস্যা, চিকিৎসা/প্রতিকার ও প্রতিরোধঃ
প্রতিকার থেকে প্রতিরোধ ভাল। এজন্য এই ধরনের সমস্যা যাতে না হয় সে ব্যাপারে খেয়াল রাখতে হবে। কারণ অন্য যেকোনো রোগের জন্য পাখি বা কবুতর অসুস্থ হলে আপনি তার সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে রোগ ভাল করতে পারবেন। কিন্তু এই ধরনের ঠোঁটের সমস্যা হলে বা ঠোঁট হারালে আপনি সেই কবুতর টিকে স্বাভাবিক অবস্থাই আনতে পারবেন না।
১) বিলম্ব না করা যে রোগের কারনে এগুলো ঘটে থাকে সেগুলো চিহ্নিত করে তার প্রতিকারের যথাযথ ব্যাবস্থা নিতে হবে।
২) পুষ্টির বা সুষম খাদ্য, ভিটামিন-মিনারেলস সরবরাহ চিহ্নিত করতে হবে।
৩) প্রয়োজনীয় লবন এর ঘাটতি দূর করতে হবে। এজন্য ভাল মানের গ্রিট সরবরাহ করতে হবে।
৪) কোন কারণ ছাড়া অতি মাত্রার বা উচ্চ মাত্রার বা দীর্ঘ কালীন বা বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টিবায়টিকের একসাথে প্রয়োগ থেকে বিরত থাকতে হবে। মনে রাখতে হবে কিছু ঔষধ কিছু ঔষধের সাথে বিক্রিয়া ঘটাতে পারে। তাই ঔষধ সম্পর্কে যদি আপনার যথাযথ ধারনা না থেকে তাহলে এগুলো উপদেশ দেয়া থেকে বা ব্যাবহার থেকে অনুগ্রহ করে বিরত থাকুন।
৫) ঘন ঘন ডিম বাচ্চা না উঠানো, রাতে পর্যাপ্ত বিশ্রাম বা ঘুমানোর বা খামারে উপযুক্ত পরিবেশের ব্যাবস্থা করা।
৬) ঠোঁটে কোন কারনে রক্তপাত বা আঘাত লাগলে দ্রুত তার চিকিৎসার ব্যাবস্থা নিতে হবে।
৭) লিভারের স্বাস্থ্য ব্যাবস্থা উন্নত করা অর্থাৎ নিয়মিত লিভার টনিক দেয়া।
৮) আঘাত জনিত কারনে ফেটে গিয়ে রক্ত বের হলে বা ভেঙ্গে গিয়ে রক্ত বের হলে হেক্সিসল বা হোমিও ক্যালেন্দুলা মাদার তুলা দিয়ে জায়গাটা ভাল করে মুছে দিতে হবে।
৯) উপরের চিকিৎসার পাশাপাশি সংক্রমণ রোধে Orasin K তৈরি করে ১ মিলি+ Contrim ১ মিলি +ফ্লাযিল সিরাপ ১ মিলি+স্যালাইন ১ গ্রাম= ৩ মিলি পানিতে মিক্স করে দিনে ৩ বার ৪-৫ দিন। আর রাইস স্যালাইন দিতে ভুলবেন না যেন।
১০) যদি কাজ না হয় তাহলে ও ঠোঁট কাল আকার ধারন করে তাহলে (Human) SkCef 500 or Sinacef 500 or Lebac 500 ইঞ্জেক্সন তৈরি করে দিনে ২ বার ২ মিলি করে ৫ দিন দিতে হবে বুকের মোটা গোস্তের মধ্যে, মনে রাখতে হবে ইঞ্জেকশান ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত ফ্রিজে রাখা যাবে।
১১) সব সময় খেয়াল রাখতে হবে যে, অ্যান্টিবায়টিক প্রয়োগ শেষ হবার পর অবশ্যই প্রোবায়টিক প্রয়োগ করতে হবে ২-৩ দিন।
১২) অনেক সময় ঠোঁট খুলে পড়ে গেলে আপনি প্লাস্টিক দিয়ে নকল ঠোঁট তৈরি করে গ্লু দিয়ে লাগিয়ে দিতে পারেন কিন্তু সেক্ষেত্রে সেই ধরনেরই কাজ হবে যেমন একজন পা হারা মানুষ নকল পা লাগালে যেমন হতে পারে।
১৩) বারতি ঠোঁট ছাঁটার সময় আলোর দিকে ধরতে হবে যতটুকু আলো দেখা যায় সেই অংশের অল্প টুকু কাটতে পারেন। আর এটি যদি আপনার অভিজ্ঞতা না থাকে তাহলে ঘসে ছোট করে দিতে পারেন। এক্ষেত্রে নেইল কাটার হালকা গরম করে বা অন্য যেকোনো কাটার হালকা গরম করে কাটতে হবে। ঠোঁট কাঁটা বা ছাঁটার উভয় ক্ষেত্রেই কবুতরের খাবার ও ভিটামিন এর দিকে খেয়াল রাখতে হবে। কারণ দাঁত ঘষে ছোট করার পর একজন মানুষের যে রকম অনুভূতি হয় এ ক্ষেত্রে একটি পাখি বা কবুতরের সেই একই রকম অনুভূতি হতে পারে।
১৪) ঠোঁটের পরিচর্যা বা চিকিৎসা চলাকালীন সময়ে যে বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে সেটি যথাযথ ও পর্যাপ্ত বিশ্রাম। এই কিবুতর বা পাখিই টিকে যেন কোন প্রকার অন্য কবুতর বা পাখি বা মানুষ দ্বারা বিরক্ত করা না হয় সে ব্যাপারে খেয়াল রাখতে হবে।
এই রোগের আলাদা ভাবে বিশেষ কোন চিকিৎসা নেই। যেসব রোগের কারনে এটি ঘটে থাকে তার নিরাময়ই এর উপযুক্ত চিকিৎসা, যদিও রোগ নির্ণয় ও এর সঠিক পরিচর্যা ও রোগ ব্যাবস্থাপনা আপনার উপর নির্ভর করে। আপনি হয়তো একশ টি অজুহাত দাঁড় করাতে পারেন। কারণ আপনার যদি সাধারন জ্ঞান থাকে তাহলে আপনি নতুন বা পুরাতন খামারি তাতে কিছু আসে যায় না। আর এটিই স্মার্টনেস এর পরিচয়, পোশাক ভাল পরিধান করলেই আর ভাল ভাল কথা বললেই স্মার্ট হয়ে যায় না। আমি জানি প্রতিবারের মত এবারেও আমার লিখা না পড়েই অনেক লাইক পড়বে অনেক ভূয়সী প্রশংসা হবে। ৫% লোক ছাড়া যারা সত্যিকার কবুতর কে ভালবাসে আর এ জন্য তাদের প্রান কাঁদে, কবুতরের উপকারের জন্য এটুকু কষ্ট স্বীকার করতে প্রস্তুত, আমার এ লিখা শুধুই তাদের জন্য। কোন কথা কেউ যদি কান দিয়ে শুনে তাহলে কোন সমস্যা নাই, কিন্তু কথা যদি কেউ মন দিয়ে শুনে তাহলে অনেক অসুবিধা আছে। যদিও সেই অসুবিধা আমার জন্য না, তাদের জন্য যারা চায় না এই সেক্টরের লোক সঠিক জ্ঞান অর্জন করুক।
পরিশেষে,
“সত্যের স্থান বুকের মধ্যে, মুখের মধ্যে নয়। কেবল মুখ দিয়ে বার হয়েছে বলেই কোন জিনিস কখনো সত্য হয়ে উঠে না। তবুও তাকেই যারা সকলের অগ্রে, সকলের ঊর্ধ্বে স্থাপন করতে চায়, তারা সত্যকে ভালবাসে বলেই করে না, তারা সত্য ভাষণের দম্ভকেই ভালবাসে বলে করে।” (দত্তা-শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়।)