ভুল সবই ভুল (কবুতর কেস স্টাডি)
“যে দেশে গুণের সমাদর নেই সে দেশে গুণী জন্মাতে পারে না” – ডঃ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ।
ওলী মনসুর হাল্লাজ (রহ:) একজন মুসলিম সাধক ছিলেন। তিনি ৮০ বছর বয়সে আল্লাহ্র ধ্যানে মসগুল হন। বেশ কিছুদিন পর তিনি হঠাৎ নিজেকে ‘আনাল হক’ বলে দাবী করে উঠলেন। মানে ‘আমিই খোদা’। আর এ ধরনের কথা ইসলামে নিষিদ্ধ ও কুফরের অন্তভুক্ত। এই অভিযোগের অপরাধে তার মৃত্যুদণ্ডের রায় হলে তাকে প্রথমে দোররা মারা হল, কিন্তু তাতে তার মৃত্যু হয় না। এবার তাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যু কার্যকর করার আদেশ হল। তাকে যখন ফাঁসিতে ঝুলানর জন্য নেয়া হল। তখন কোনমতেই তার মৃত্যু হল না। ফলে তাকে এনে টুকরো টুকরো করে কেটে ফেলা হল কিন্তু তার শরীরের প্রতিটি কনা ‘আনাল হক’ জিকির করতে লাগল। ফলে তেল ঢেলে তাতে আগুন দিয়া হল। কিন্তু তাতেও কাজ হল না। আগুনে পুড়ানো প্রতিটি কয়লা একই ভাবে জিকির করতে লাগল। এবার সেই কয়লা গুলো টাইগ্রিস নদীতে ফেলে দিলে ঘটল বিপত্তি। নদী ভীষণ ভাবে ফুলে বাগদাদ নগরির দিকে ধেয়ে আসতে লাগল। এটা দেখে তার এক শিস্য ওলী মনসুর হাল্লাজ (রহ:) একটি জামা এনে নদীতে ফেলে দিলে নদী শান্ত হয়। এরপর অভিযোগকারী বুঝতে পারলেন তারা কী ভুল করলেন। সবাই ছুটে গেলেন আরেকজন ওলীর কাছে ব্যাখ্যা চাইতে। তিনি জানালেন, ‘আল্লাহর সাথে মুনসুর হাল্লাজের (রহ:) এত গভির সম্পর্ক হয়ে যাওয়ায়। সে যা বলতে চাচ্ছিল সাধারন মানুষ তা বুঝতে ব্যর্থ হয়। আসলে তিনি বলতে চেয়েছিলেন যে ‘আনাল হক’ অর্থাৎ ‘আল্লাহ্ সত্য’ আর এই জিকির তার রূহে, তার চিন্তা চেতনায় আল্লাহ্র জিকির এমন ভাবে বসে গেছিল যে তা থেকে এমন জিকির প্রতিধ্বনি হচ্ছিল।
আমাদের কবুতর সেক্টরে এই ঘটনা নতুন না, আমাদের এই সেক্টরের সেই আল্লাহ্ অলি মনসুর হাল্লাজ (রহ:) এর কথা যেমন সেদিন কেউ বুঝতে পারে নাই, তেমনি কবুতর সেক্টরেও আমরা একজন আরেকজনের কথা বুঝতে পারি না বা বুঝতে চেষ্টা করি না বা সঠিক ভাবে হয়ত বুঝাতেও পারি না। আমার এক এক জন যেন অন্য গ্রহের বাসিন্দা। ফলশ্রুতিতে এই সেক্টরে আজ এক চরম অবস্থা বিরাজ করছে। আমাদের দেশে এই সেক্টরের জন্য তেমন কোন প্রশিক্ষন প্রাপ্ত কবুতরের ডাক্তার নাই। কোন পৃষ্ঠপোষকতা নাই, নাই কোন কারো পারস্পারিক সহযোগিতার মনভাব। আমারা সবাই সব জান্তা বা আমরা সবাই একটু বেশী বেশিই জানি। আমন কাউকেই পাওয়া যাবে না যাতে, সে স্বীকার করে যে সে এই ব্যাপারটা জানে না। আপনি যাকেই জিজ্ঞাস করেন না কেন সেই বলবে ভাই এই সমস্যা? এটা করেন আমি এটা করে ভাল ফল পেয়েছি, সেটা করেন ওটা অনেক ভাল উপকার হয় ইত্যাদি ইত্যাদি। আর যদি আপনি সেই চিকিৎসা কাজে না লাগে তাহলে বলা হবে ভাই আসলে তার হায়াত ছিল না তো তাই বাচে নাই। এই সেক্টরে কিছু ভুল কথা, ভুল কাজ ও কিছু কুসংস্কার প্রচলিত আছে। আর এসব থেকে বের হয়ে আসার কোন মন মানসিকতা আমাদের নেই। আমাদের দেশে রোগের ধরন ও নিরাময়ের ক্ষেত্রে তিন ধরনের খামারি আছেন।
১) অতি চালাক বা অতি বুদ্ধিমান কবুতর খামারিঃ এই ধরনের খামারিরা প্রয়োজনের তুলনায় একটু বেশিই চালাক ও বুদ্ধিমান হয়ে থাকে। এরা কবুতরের রোগ হলে একশ জনের কাছে উপদেশ নেন। কিন্তু কোনটাই পালন করেন না কারণ এরা চিন্তা করতে থাকেন কোন উপদেশ পালন করবেন। কি পরিমান ঔষধ প্রয়োগ করবেন। কারণ এরা মানুষের ডোজ এর সাথে কবুতরের ডোজ এর তুলনা করেন আগে। মানুষকে এত পরিমান দিয়া হয় তাহলে কবুতর কে এই পরিমান কেন দিবে এটা হয়ত ওভার ডোজ হয়ে যাবে ইত্যাদি ইত্যাদি। এই সব খামারিদের সম্পর্কে বলে রাখা ভাল যে, উনারা সব সময় আমাদের দেশের ঔষধের সঙ্গে বাইরের ঔষধের তুলনা করেন। এসব খামারি দের ধারনা যেহেতু ঔষধের গায়ে লিখা আছে এ ঔষধের শক্তি তাহলে হয় সেটাই সঠিক, কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, আমাদের দেশে একটা ঔষধের গায়ে যে পরিমাণ লিখা থাকে বাস্তবে সেই পরিমাণ থাকে না। ফলে এই ধরনের অতি চালাক খামারিরা চিন্তা করতে করতেই কবুতরের কেল্লা ফতে হয়ে যায়। তখন নিজদের কে সান্তনা দিতে থাকে আসলে ওর হায়াত ছিল না তো তাই মারা গেছে। বলাই বাহুল্য আমাদের দেশে অতি বুদ্ধিমান খামারির সংখ্যাই বেশী। আর এরা কবুতর কে না ধরেই রোগ নির্ণয়ের চেষ্টা করে থাকে। আর এই ধরনের খামারিদের আরেকটা বড় গুন হল যে এরা মনে করেন কবুতরের কোন রোগ নাই, আর তাদের এই ধ্যান ধারনা অন্যের উপর চাপিয়ে দিবার চেষ্টা করে থাকেন। অথচ এ সব লোকের কবুতরই বেশী মারা যায়। যদিও তারা প্রকাশ করতে চান না।
২) বিভ্রান্ত খামারি বা নার্ভাস খামারিঃ এই ধরনের খামারিরা খুব বেশী রকমের বিভ্রান্ত ও নার্ভাস থাকে। রোগ যাই হোক না কেন এরা কবুতরকে ঔষধ খাওয়াতে বেশী পছন্দ করেন। একটু যদি পাতলা পায়খানা বা সবুজ পায়খানা হয় কবুতরের তখন শুরু হয় এসব খামারিদের অহেতুক টেনশন, দশ জনের কাছ থেকে উপদেশ নিবেন আর সব উপদেশই অনুসরন করার চেষ্টা করনে। ফলে উনারা নিজের অজান্তেই কবুতরের অবস্থা খারাপ করে ফেলেন, এমন কি সাধারন একটা রোগের জন্য ৪-৫ তা অ্যান্টিবায়টিক এক সাথে প্রয়োগ করতেও এই ধরনের খামারিরা পিছপা হন না। আর উনারা সব সময় নতুন এর একটা সাইন বোর্ড সামনে ঝুলিয়ে বসে থাকেন। কিছু হলেই ভাই আমি তো নতুন তাই বুঝিনি, ভাই আমি তো একেবারেই প্রথম না এ রকম হয়েছে। ভাই আপনাদের বলি এখানে নতুন বা পুরানতের দোহাই দিয়ে আপনি আপনার দায়িত্ব থেকে সরে যেতে পারবেন না। আপনি নিজের জন্য যখন এরকম করেন না তাহলে কেন এই নিরীহ পাখির প্রতি এত অত্যাচার করেন, বলবেন কি?
৩) বোকা খামারি বা আদর্শ খামারিঃ আমাদের দেশে এই ধরনের খামারির সংখ্যা খুবই কম। এই ধরনের খামারিরা এত চিন্তা করেন না রোগ সম্পর্কে। যদি সন্দেহ হয় তাহলে উপযুক্ত একজনের উপদেশ নেন আর সেটাই অনুসরন করার চেষ্টা করেন। অনর্থক ঔষধ এরা দেন না। ফলে এসব খামারিদের কবুতর অন্য যেকোনো খামারিদের থেকে ভাল থাকে। আর উনারাই হলেন আদর্শ কবুতর খামারি। আর এ ধরনের লোকরা আমাদের বেশী দরকার।
আপনি যাই করেন আর যেখানেই থাকেন কিছু বিষয় আমাদের মাথায় রাখতে হবে।
প্রথম পদক্ষেপঃ
১) আপনার কবুতর কে অবশ্যয় ফুটানো/ টিউব ওয়েল/ ফিল্টার/ বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করতেই হবে। আর এর কোন বিকল্প নাই। আপনি যতই প্রতিরোধ ব্যাবস্থা নেন না কেন এটি আপনার প্রথম ও প্রধান শর্ত হিসাবে বিবেচনায় রাখতে হবে।
২) আপনার খামারের ট্রে নিয়মিত পরিস্কার করতে হবে, আর এর কোন বিকল্প নাই।
৩) ভ্যানটিলেশন ব্যবস্থা ভাল হতে হবে এর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা নিতে হবে।
৪) কবুতরকে পরিস্কার খাবার সরবরাহ করতে হবে। বিশেষ করে শীত ও বর্ষার সময় খাবার গরম করে পরিবেশন এর ব্যাবস্থা করতে হবে। কারণ এই সময় খাবারে ফাঙ্গাস বেশী হয়, আর খাবারে ফাঙ্গাস কবুতরের অসুস্থ হবার জন্য বেশী দায়ী।
৫) কবুতররের সাল্মনেল্লার প্রকোপ তিন মৌসুমে দেখা যায় বেশী
ক) অতি শীত
খ) অতি বৃষ্টি ও
গ) অতি গরম
আর ক্ষেত্রে আপনার খামারের তাপমাত্রা সমমান রাখাই আপনার অধিক জরুরি।
৬) বাইরের পাখি, ইদুর, তেলেপোকা,মাছি ও মশা থেকে আপনার খামার প্রতিরোধের ব্যাবস্থা করতে হবে।
দ্বিতীয় পদক্ষেপঃ
১) প্রতিমাসে সাল্মনিল্লার প্রতিরোধের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা নিতে হবে। আর এক্ষেত্রে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া মুক্ত প্রাকৃতিক ব্যাবস্থা নেয়াই শ্রেয়। কোন প্রকার অ্যান্টিবায়টিক এর সাহায্যে প্রতিরোধ ব্যাবস্থা নিবেন না। কারণ এতে হিতে বিপরীত হতে পারে।
২) কবুতরকে কৃমির ঔষধ ৪৫ থেকে ৬০ দিনের মধ্যে অবশ্যই প্রয়োগ করতে হবে। আর এর আগে আপনার কবুতর কে তৈরি করতে হবে।
৩) কবুতরের ভ্যাকসিন ছাড়া হাঁস মুরগির ভ্যাকসিন কবুতরকে প্রয়োগ করতে যাবেন না এতে আপনার কবুতরের কোন উপকার তো হবেই না। বরং অপকার হয়ে যাবে। আর একটা কথা মনে রাখবেন অনেকেরই ধারনা ভ্যাকসিন কবুতরের নানা ধরনের রোগ প্রতিরোধ বা প্রতিকার করে যা আসলেই সঠিক না। ভ্যাকসিন কেবল মাত্র প্যারামক্সি ভাইরাস থেকে কবুতর কে প্রতিরোধ করে থাকে।
তৃতীয় পদক্ষেপঃ
১) কবুতর রোগে আক্রান্ত হলে এর ধরন নির্ণয় করুন, ঔষধ নির্বাচন করুন, প্রয়োগ মাত্রা ঠিক করুন এর পরই ওষুধ কেবল প্রয়োগ করুন। যেকোনো অ্যান্টিবায়টিক প্রয়োগ মাত্রার সময় কাল ৩-৫ দিন যদি দেখেন ৩ দিনের মধ্যেও এর পায়খানা কোন পরিবর্তন হচ্ছে না। তাহলে আপনি অন্য অ্যান্টিবায়টিক ব্যাবহার করতে পারেন, তার আগে না। কারণ অ্যান্টিবায়টিক প্রয়োগ করার পর একটা সময় দিতে হয় আর কাজ হবার জন্য।
২) অ্যান্টিবায়টিক প্রয়োগের পর যদি রোগ ভাল হয় তাহলে প্রবায়টিক ১-২ দিন প্রয়োগ করতে যেন ভুল না হয়।
৩) একটা কবুতর কে যে সিরিঞ্জ ব্যাবহার করছেন সেটা আরেকটা কবুতরের জন্য ব্যাবহার করবেন না করে। আলাদা সিরিঞ্জ ব্যাবহার করবেন। একটা অসুস্থ কবুতর কে ধররার পর আরেকটা কে ধরার আগে অবশ্যই হাত ভাল করে জীবাণু নাশক দিয়ে ওয়াশ করে নিবেন বা রাব করে নিবেন।
আমাদের কবুতর সেক্টরে অনেক ভুল ধারনা ও কুসংস্কার এর বশবর্তী হয়ে অনেক কাজ করে থাকেন যা আগেও আমি অনেক বার বলেছি, সেটা আমাদের আরেকবার একটু চিন্তা করার সময় এসেছে। যেমনঃ-
১) অনেকেই মনে করেন যে কবুতরের ডিম ফুটার বাচ্চার বাবা মা কে ভিটামিন ও মিনারেলস দিতে হয় না। আসলে তা ঠিক না, এই সময়ই তাদের অতিরিক্ত খেয়াল রাখতে হয়। তা না হলে তাদের কর্প মিল্ক সুকিয়ে যেতে পারেন। এই সময় ভাল গ্রিট খাবার দিতে হয়। আর মনে রাখবেন ১০ দিন পর্যন্ত কবুতর তাদের বাচ্চাদের শুধু মাত্র কর্প মিল্কই খাওয়াই অন্য কিছু না।
২) কসুম ফুলের বিচি কৃমি নাশ করে, আর ফলে অনেকেই আছেন যারা শুধু কুসুম ফুলের বিচি দিয়ে থাকেন ঔষধ প্রয়োগ করেন না। এটা আসলেই সঠিক না। কবুতরের কৃমি একটা মারাত্মক সমস্যা আর এতে আপনাকে এত বড় রিস্ক নেয়া উচিৎ না।
৩) ভ্যাকসিন দিলে কবুতরের সব রোগ ভাল হয়ে যায়। কেউ বলেন সবুজ পায়খানা ভাল হয় কেউ বলেন তারা হাঁসমুরগির ভ্যাকসিন ব্যাবহার করে ভাল উপকার পেয়েছেন। এটা সেই সব কল্প গল্পের মত নানা ধরনের কথা ছরান অন্যের মধ্যে। ঠিক সেই চিলের কবিতার মত না জেনেই সবাই সেই ভ্যাকসিনের পিছনে ছুটে বেরান। কিছু খামারি আছেন নতুন খামারিদের বলে বেরান যে ভ্যাকসিন দেন না হলে আপনার কবুতর বাচবে না ইত্যাদি ইত্যাদি। এই কারনে কিছু লোক হাঁস মুরগির ভ্যাকসিন দিয়ে থাকেন। একজন নতুন খামারি যদি এ রকম ভ্রান্ত চিন্তা করেন তাহলে মেনে নেয়া যায় কিন্তু সবচেয়ে অবাক লাগে যখন ১০-১৫ বছর কবুতর পালেন এ রকম পুড়ানো খামারিও এ রকম ভ্রান্ত ধারনা পোষণ করেন। তখন সত্যি সত্যিই মনে হয় আসলেই আমরা ১০০ বছর পিছিয়ে আছি উন্নত বিশ্ব থেকে আর আমাদের কিছুই করার নাই। কারণ আমরা নিজেরাই আমাদের বড় প্রতিবন্ধক।
৪) অনেকেরই ধারনা যে কুসুম ফুলের বিচি কৃমি নাশক আসলে এটা সত্য না মিথ্যা সেটা আমি বিচার করতে যাব না, কিন্তু মনে রাখতে হবে কোন বড় রোগের ক্ষেত্রে এই ধরনের রিস্ক আপনি নিবেন কিনা সেটা আপনার নিজের বিবেচ্য বিষয়।
৫) আমাদের অধিকাংশ খামারি পুরো কথা বলতে পছন্দ করেন না, তারও অন্যের সাথে মানসিক গেম খেলে থাকেন, এরা প্রথমেই বলেন, আমার কবুতর ঝিমাচ্ছে। সব কিছুই ঠিক আছে …এর পর প্রশ্ন করলে আসতে আসতে বের হয়ে আসে যে সব ধরনের সমস্যাই আছে সেই কবুতরের মধ্যে। তাহলে এ রকম কেন, এর কারণ ঠিক মত লক্ষ্য না করা। আর কথা চেপে রাখতে রাখতে এ ধরনের খামারি রা বেশির ভাগই গ্যাস্ট্রিক আলসারে ভুগেন বলে আমার ধারনা।
৬) কিছুদিন আগে এক সেমিনারে এক নামকরা ভেটেনারি ডাক্তার কিছু তথ্য দিলেন কবুতর সম্পরকে… শুনে অবাক হলাম…কিছু বলার সুযোগ পেলাম না … কারণ যেহেতু তার নামের আগে ডাক্তার আছে তাই ভুল বললেও তিনি সঠিক … কি সেটা…তিনি তথ্য দিলেন। যে কবুতর নাকি ৩০ বছর বাচে…? আমার জানামতে ১৫ বছর তাও আবার সেটা যদি ব্রীড করা না হয়, একটা রেসার ২১ বছর বেচে থাকার রেকর্ড আছে বলে জানা যায়। ফিটকারি পানিতে দিলে পানি জীবাণু মুক্ত হয়ে যাই…। অথচ বিশেষজ্ঞরা বলেন যে এতে পানি মাত্র ৫%-১০% বিশুদ্ধ হবার সভাবনা থাকে। কবুতরের গায়ে পোকা হলে গুল+ন্যাপথলিন+ করপুর…আরেকটি কি যেন অ্যাসিড ধরনের উপাদান দিয়ে গোসল দিতে বললেন আমার মনে নাই…খালি এ টুকু মনে আছে যে এ সব কথা শুনে আমার যে কত চুল আছে তা রাগে খাড়া হয়ে গেছিল। আমাদের দেশের নামকরা পশু ডাক্তারদের যদি এই অবস্থা হয় তাহলে অন্যদের কথা না নাই বা বললাম।
৭) আমাদের কবুতর সেক্টরে সবচেয়ে সহজ কাজ হল সামাজিক সাইট গুলো তে নানা ধরনের নানা নামে কবুতরের রঙ্গিন ছবি দিয়ে গ্রুপ তৈরি করা। আর সেই সব গ্রুপ এর অ্যাডমিন হয়ে গিয়ে মনে করেন বিশাল একটা কিছু করে ফেলেছেন তারা! এমনকি তারা তাদের নামের আগে এই সব গ্রুপের অ্যাডমিন বলে প্রচারনা চালান। আমাকে সেদিন একজন এ রকম গ্রুপের অ্যাডমিন তার পরিচয়ের আগে এ রকম একটা বিশেষণ যোগ করে জানালেন আমি খুবই আশ্চর্য হলাম। আর এই সব গ্রুপ কে জনপ্রিয় করতে গিয়ে নানা ধরনের আজগুবি সব চিকিৎসা ব্যাবস্থা দিতেছেন জেনে না জেনে, কয়েকদিন আগে একটা গ্রুপ এ শীতকালীন একটা ছক দেখলাম, সেখানে সাল্মনেল্লার জন্য সাতটি অ্যান্টিবায়টিক ব্যাবহারের পরামর্শ দিয়া হয়েছে, সাদুরি খাওয়ানোর পরামর্শ দিয়া হয়েছে ercot খাওয়ানোর পরামর্শ দিয়া হয়ে বিভিন্ন রোগের প্রতিরধেক হিসাবে, কি আশ্চর্য ব্যাপার!! এরা কি আদৌ সত্যিকার কবুতর প্রেমি? নাম প্রাচারের নেশা এসব লোকদের কোথাই নিয়ে গিয়েছে…! আল্লাহ্ এ সব লোকদেরকে সঠিক বুঝ দান করুন…আমীন।
আমাদের যাই করি না কেন আর যেখানেই থাকি না কেন। আপনার কবুতর পালার বয়স যত কম বা যতই বেশী হক না কেন আপনার যদি কমন সেন্স থাকে, তাহলেই আপনি আদর্শ খামারি, আপনার যদি এই প্রাণীটার প্রতি ভালবাসা থাকে তাহলে আপনি আদর্শ খামারি, আপনি নিজের অনুভব থেকে যদি এই প্রাণীর প্রতি সদয় আচরণ করেন তাহলেই আপনি আদর্শ খামারি, হক না আপনার ১ জোড়া বা ২ জোড়া কবুতর হক না আপনার অল্প দামী কবুতর, কিন্তু প্রানের মূল্য তো সবই সমান তাই না। যদিও আমাদের অনেকেরই সেই সঠিক বোধটুকু নাই, আশা করি ও দোয়া করি যে, একদিন আমাদের সবারই বোধোদয় হবে। পরিশেষে একটা কবিতা বলার লোভ সামলাতেতে পারছি না,
“বল দেখি এ জগতে ধার্মিক কে হয়, সর্ব জীবে দয়া যার, ধার্মিক সে হয়।
বল দেখি এ জগতে সুখী বলি কারে, সতত আরোগী যেই, সুখী বলি তারে।
বল দেখি এ জগতে বিজ্ঞ বলি কারে, হিতাহিত বোধ যার, বিজ্ঞ বলি তারে।
বল দেখি এ জগতে ধীর বলি কারে, বিপদে যে স্থির থাকে, ধীর বলি তারে।
বল দেখি এ জগতে মূর্খ বলি কারে, নিজ কার্য নষ্ট করে, মূর্খ বলি তারে।
বল দেখি এ জগতে সাধু বলি কারে, পরের যে ভাল করে, সাধু বলি তারে।
বল দেখি এ জগতে জ্ঞানী বলি কারে, নিজ বোধ আছে যার জ্ঞানী বলি তারে।“
(কবিঃ ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত, কে? কবিতা থেকে নেয়া)
(বিঃ দ্রঃ সকলের প্রতি আগে সম্পূর্ণ লিখাটি পড়বেন বিবেচনা করবেন, যদি ভাল লাগে তাহলেই লাইক দিবেন ও মন্তব্য করবেন। লাইক দিবার মানষে লাইক দিবেন না দয়া করে।)
লেখক : সোহেল রাবি ভাই