আপনি কি ধৈর্যশীল? তাহলেই খামার করুন। (কবুতরের কেস স্টাডি)

আপনি কি ধৈর্যশীল? তাহলেই খামার করুন। (কবুতরের কেস স্টাডি)

১) আল্লাহ্‌ বলেন,“ আর যারা সবর করে, আল্লাহ তাদেরকে ভালবাসেন। ” (সূরা আল ইমরানঃ আয়াত-১৪৬)

২) হাম্মদ ইব্‌ন বাশ্‌শার (রহঃ)…আনাস (রাঃ) সূত্রে নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,” বিপদের প্রথম অবস্থায়েই প্রকৃত সব্‌র। “(সহীহ বুখারি হাদিস নাম্বারঃ ১২২৪)

৩) কুতায়বা (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ ” আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন, আমি যখন আমার মুমিন বান্দার কোন প্রিয়তম কিছু দুনিয়া থেকে তুলে নেই আর সে ধৈর্য ধারণ করে! আমার কাছে তার জন্য জান্নাত ব্যতীত অন্য কোন প্রতিদান নেই। ” (সহীহ বুখারি হাদিস নাম্বারঃ ৫৯৮১)

কিছুদিন আগে আমাকে এক ভাই ফোন দিলেন রাত ১টা ৩০ মিনিটে! আর ফোন দিয়েই দুঃখ প্রকাশ করলেন…! তিনি অনেক বিচলিত হয়েই কল দিয়েছেন বুঝা গেল। আমি একটু বিরক্ত হলেও তার পেরেশানি শুনে তাকে কিছু উপদেশ দিলাম এবং ২৪ ঘণ্টা পর আপডেট দিতে বললাম। তিনি সকাল ৬ টাতে আবার কল দিলেন আর জানালেন যে তার কবুতরের কোন উন্নতি হয়নি। আমি তাকে বুঝিয়ে বললাম ও সন্ধ্যাই কল দিতে বললাম! তিনি আবার ১০টাই কল দিলেন! সেই একই কথা…আমি তখন একটা জরুরি ও কঠিন সমস্যার মধ্যে হাবুডুবু খাচ্ছি, আমি তখন উনাকে বললাম ভাই এইটুকু ধৈর্য যদি রাখতে না পারেন তাহলে খামার করা ও কুবুতর পালা ছেড়ে দেন! যদিও মনে হল কথাটা বলা হয়ত উচিৎ হয়নি কিন্তু কি করব?

একজন যিনি কবুতরের খামার করতে আগ্রহী তাদের মানবিক গুণাবলীর সাথে সাথে আত্মিক গুণাবলীও অর্জন করতে হয় আর তাদের মধ্যে অন্যতম হল ধৈর্য। আপনার যদি এই গুনটি না থাকে তাহলে প্রথমেই বলব, ভাই আপনাকে দুই হাত জোর করে বলছি, আপনি এই ধরনের চিন্তাও মাথায় আনবেন না। অনেকেই বলেন ভাই কবুতর পালি কিন্তু এটার জন্য ওটার জন্য সময় দিতে পারি না বা অনেকেই বলেন ভাই ঠিক মত খেয়াল করেন নাই অথবা আমি নতুন তো তাই বুঝতে পারি নাই। আপনি নতুন না পুরাতন আপনি চাকরি করেন না ব্যবসা করেন নাকি ছাত্র…এসব অজুহাতে আপনি আপনার এই প্রাণীটির প্রতি দায়িত্ব এড়াতে পারবেন না। আপনাকে কেউ জোর করেনি বা আপনার কবুতর পালতেই হবে এমন কোন ধর্মীয় বিধানও নাই। তার পরও আপনি যদি পালেন আর আপনার অবহেলার কারনে এ ধরনের ঘটনা ঘটে তাহলে আপনাকেই এর জন্য জবাবদিহি করতে হবে। আমাদের অধিকাংশ খামারিই আছেন যারা কবুতরের রোগের ব্যাপারে ঠিক মত পর্যবেক্ষণ করেন না। আর এই জাইগাতেই ধৈর্যশীলতার পরিচয় বেশী দিতে হয়। কিন্তু প্রায়ই দেখা যায় খামারিরা বলেন, ভাই আমার কবুতর ঝিমাচ্ছে? এর পর একটার পর একটা প্রশ্ন করে তারপরই আসল ঘটনা বের হয়। মাঝে মাঝে মনে হয়, আমি মনবিজ্ঞান (psychology) নিয়ে কেন পড়াশুনা করলাম না? তাহলে হয়ত মানুষের মনের অবস্থা কিছুটা হলেও বুঝে নিতে পারতাম। আমি হয়ত কোন ভনিতা না করে, খুবই সহজে ঔষধ বলি তাই হয়ত কারো মনপুত হয়না। এ রকম এ ভাইকে তার কবুতরের লক্ষণ দেখে ঔষধ বলে দিলাম কিন্তু তিনি তা ঠিকমত প্রয়োগ করলেন না। কবুতর মারা গেল উনি পশু হাসপাতালে নিয়ে গেলেন, পশু ডাক্তার ময়না তদন্ত (মানে ব্যাবছেদ করে খালি চোখে দেখা) করে দেখে বললেন যে ম্যালেরিয়া হয়েছিল। কিভাবে বললেন? যেকোনো প্রাণীর মরার পর তার রোগের প্রথম যে লক্ষণ সেটা লিভারে প্রকাশ পায়। আর সেটা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কাল রঙ ধারন করে থাকে। আর যেহেতু উনি ব্যাবছেদ করে দেখলেন যে লিভার রঙ কাল, সেহেতু তিনি সিধান্ত দিলেন যে এটার ম্যালেরিয়া। বলাই বাহুল্য যে, শুধু ম্যালেরিয়ার ক্ষেত্রেই যে, এই ধরনের লক্ষণ দেখা যাবে তা নয়, তারপরও কেন বললেন? জানা নেই? তারপরও এই ধরনের ডাক্তারদের প্রতি আমাদের অগাধ বিশ্বাস! কিছুদিন আগে এই ধরনের এক পশু ডাক্তার এর প্যাড দেখালেন আমাকে সেখানে, অনেক ডিগ্রীয়ের সাথে সার্জন ও যোগ করা ছিল আশ্চর্য হলাম। আমাদের দেশে পদবী আর ডিগ্রি লাগানো কত সহজ। আর হয়ত এই কারনেই ভুয়া ডাক্তারের সংখ্যা নেহাতই কম না। আর তাদের কদরও অনেক বেশী। যাই হোক, আপনি যাই করুন আর যার কাছ থেকেই আপনি চিকিৎসা নেন আপনার প্রাণীর জন্য, যেহেতু আল্লাহ্‌ আমাদের সাধ্রন জ্ঞান দিয়েছেন, তাই একটু বিবেচনা করবেন। তাহলেই আপনি আপনার কাঙ্ক্ষিত লক্ষে পৌঁছাতে পারবেন, আর তা না হলে যে তিমিরেই আছেন সেখানেই থাকবেন।

পরিশেষে, হাদিসের বানী দিয়ে শেষ করছি, আবূল ইয়ামান (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী (সাঃ) বলেছেনঃ “কিয়ামত কায়েম হবে না, যে পর্যন্ত না ইল্‌ম উঠিয়ে নেওয়া হবে, অধিক পরিমাণে ভুমিকম্প হবে, সময় সংকুচিত হয়ে আসবে, ফিতনা প্রকাশ পাবে এবং হারজ বৃদ্ধি পাবে। (হারজ অর্থ খুনখারাবী) তোমাদের সম্পদ এত বৃদ্ধি পাবে যে, উপচে পড়বে। ” (সহীহ বুখারি হাদিস নাম্বারঃ ৯৭৯)

মূল লেখক : সোহেল রাবি ভাই