“নিশ্চয় মানুষ বড় অকৃতজ্ঞ।“ (সূরা হাজ্জ্বঃ আয়াত-৬৬)
এক গ্রামে এক লোক বাস করত। লোকে তাকে নাখোশ বা অকৃতজ্ঞ নামে ডাকত। কারন সে কোনদিন কোনকিছুতেই সন্তুষ্ট হতে পারত না বা কেউ থাকে কোন কাজে খুশি করতে পারত না। কেউ কোনদিন দেখি নাই যে সে কাউকে খুশি মনে একটা ধন্যবাদ দিয়েছে বা তাকে কিছু করার পর একটু হাসিমাখা মুখ দেখেছে। এমন হইছে যে কেউ তাকে কোন উপহার দিয়েছে, সে হয়ত উপহারটা দেখে বলল। হুম, আসলে এটা তেমন ভাল কিন্তু এ রকম আগে আমার অনেক ছিল বা হয়ত কেউ তাকে দাওয়াত দিয়েছে। সে খাওয়াদাওয়ার পর বলল,” আসলে, খাবার টা তেমন মজা হয়নি, অমুক অমুক খাবারে লবন একটু কম হয়েছে! আর অমুক অমুক খাবারে ঝাল একটু বেশী হয়েছে।” এ ভাবে দিন যায় বছর যায় কিন্তু একই রকম, শেষে সবাই মিলে ঠিক করল যে তাকে তুষ্ট করার জন্য কি করা যায়। অনেক চিন্তা ভাবনা করে বের করা হল। সবাই মিলে চাঁদা তুলে তাকে বিশাল আয়োজন করে খাওয়ান হবে ও অনেক ভাল ভাল দামি দামি উপহার দিয়া হবে এবার দেখি সে কি বলে? যেমন কথা তেমন কাজ। অনেক আয়োজন করা হল অনেক উপহার কিনা হল, এরপর যথা সময়ে থাকে দাওয়াত ও করা হল। অনেক আইটেম এর খাবার অনেক উপহার সাধারন যে কোন লোক দেখলে অবাক হয়ে যাবার কথা বা আনন্দে পুলকিত হয়ে যাবার কথা কিন্তু সে হল না, প্রথমে সে খাবার ও উপহার সামগ্রি দেখে একটু ভ্রু কুচকাল এরপর সে খেতে আরম্ভ করল, এরপর উপহার সামগ্রী গুলো নিল। সবাই খুবই ব্যাতিবাস্ত কি করব কি করব এমন। সবারই খুবই আগ্রহ যে, আজ সে কি বলে সেটা শুনার জন্য। খাওয়া দাওয়া শেষ হল, সবাই তার কাছে আসে ভিড় জমাল। কি ব্যাপার কি অবস্থা কেমন হয়েছে খাবার ও উপহার ? সে সবার দিকে একবার নজর বুলাল। এরপর ভ্রু কুচকে বলল, আসলে সব খাবারই ভাল হয়েছে, উপহার সামগ্রীও ভাল। কিন্তু আসলে কি জান…সব সমই একটা কথা মনে রাখবা…বেশি ভাল আবার কিন্তু আবার ভাল না। একথা শুনে গ্রামের লোকজনের মাথা গরম হয়ে গেল, বলে কি লোকটা এত কষ্ট করে এত কিছু করা হল তারপরও। আর কেউ সহ্য করতে পারল না। তাকে গ্রাম থেকে মেরে বিদায় করে দিল।
এটা ত ছিল একটা বিছিন্ন ঘটনা, আমাদের চারপাশে একটু চোখ বুলালে বা খেয়াল করলে এ ধরনের লোকের সংখ্যা নেয়াত কম মিলবে না। প্রতি ১০ জনে ১ জন কমপক্ষে পাওয়া যাবে। যাদের বায়গ্রাফি পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে যে, জীবনে কাউকে সাহায্য করুক আর নাই করুক সমালচনার ব্যাপারে অগ্রণী ভুমিকা পালন করে থাকে। কোন প্রকার সুকরিয়া নাই।
আল্লাহ্ বলেন, “সুতরাং তোমরা আমাকে স্মরণ কর, আমিও তোমাদের স্মরণ রাখবো এবং আমার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর; অকৃতজ্ঞ হয়ো না।” (সূরা আল বাক্বারাহঃআয়াত-১৫২)
একবার একজন বলেছিলেন যে একটা পাখির বাসাই অনবরত ঢিল মারতে থাকলে সেই বাসাটা একসময় ভারি হয়ে পরে যাবে। আমি কবুতরের টেনশন, আর প্রেশার নিতে নিতে নিজের প্রেশার কমে আজ স্ট্রেস এর চরম অবস্থাই পৌঁছেছি। নার্ভাস ব্রেক ডাউন হয়ে এক চরম সীমায় পৌঁছে গেছি। তাই এখন দীর্ঘ অবসরে যেতে চাই। যারা জেগে ঘুমাই তাদের জাগান মুশকিল আর আমার এটা দায়িত্ব নয় সবারই ঘুম ভাঙ্গানো। তাই যারা জেগে ঘুমাই আর সত্যিই ঘুমাই তারা ঘুমাক শান্তিতে, জ্ঞানপাপী তাদের অশুভ জ্ঞানের চর্চা করতে থাক প্রান ভরে।
আল্লাহ্ বলেন,”আপনি সবর করবেন। আপনার সবর আল্লাহর জন্য ব্যতীত নয়, তাদের জন্যে দুঃখ করবেন না এবং তাদের চক্রান্তের কারণে মন ছোট করবেন না।(সূরা নাহলঃআয়াত-১২৭)
আজ মনে সত্যিকার অনেক দুঃখ ও কষ্ট নিয়ে এই পোস্ট লিখছি জানি না আবার কবে লিখব। আজ অনেক গুলো মনকষ্টের মধ্যে একটা হল, আমার পাশের বাসার এক ঝগড়াটে মহিলা আমার কবুতর পালার ব্যাপারে অনেক দিন ধরে নানা ভাবে বাধা দিয়ে আসছিল, তাই এই মাসে বাসা পরিবত্তন করে চলে যাব, নতুন বাসাও ঠিক করে ফেলেছি। কিন্তু সেই মহিলা আমার পছন্দের টাইগার বুখারা নর কে তারের ফাদের সাহায্যে খাঁচার ভিতর থেকে গলায় আটকিয়ে টান মেরে গলাটা ছিরে ফেলেছে, সকালের ঘটনা আমি একটু পরে আসে দেখি তার মাথাটা ছিরে থ্যতা হয়ে আছে, আর রক্ত পাসের বাসার বারান্দায় সাথে ফাদটা (তবে ফাস টা খোলা), আমার কান্না বের হয়ে গেল, সেটা দেখে মহিলা টা মুচকি মুচকি হাসতে লাগল। অনেক গালি মন্দ করলাম, কিন্তু তাতে আমার কবুতর তো আর ফিরে আসবে না! এমন নিঃসংস কিভাবে মানুষ হতে পারে? মাদিটার কান্না দেখে আমার কান্নার মাত্রা বেড়ে গেল, কিন্তু এ সব কান্না অনেক মানুষেরই হৃদয় গলাতে পারে না। দুপুরে খাওয়া দাওয়া করতে পারলাম না। আমার কান্না দেখে বাসার সবার মন খারাপ হল, কিন্তু যার জোড়া তাকে হয়ত আরেকটা এনে দিতে পারব, কিন্তু তার সেই ভালবাসা কি আবার এনে দিতে পারব?
মাথার মধ্যে অনেক কথা ঘুরপাক খাই কিছু বলা হয় কিছু অব্যাক্ত থেকে যাই, কারন অনেক কথা অনেক সময় অনেক জায়গায় বলা যাই না। আমরা যারা কবুতর পালি তারা শুধুই ডিম বাচ্চা চাই! কবুতর চাই! আর সেগুলো বিক্রি করে অনেক অর্থ কামাতে চাই! কিন্তু খুবই কম লোক পাই যারা কবুতর কে সত্যিকার ভালবাসে। একটা কবুতর প্রেমি পেলাম না যে কিনা একটা কবুতর যদি ২০ দিন থেকে ১ মাস ডিম না দেই তাহলে অস্থির না হতে। আমরা যদি আমাদের বাসার পরিবারের কথা একবার চিন্তা করি, বা আমাদের বোন বা নিকট আত্মীয় এর কথা চিন্তা করি তাদের জন্য কি এ ভাবে ঘন ঘন বাচ্চা হবার কথা চিন্তা করতে পারব? কেন পারব না? হা কারন তাদের শারীরিক সমস্যা হতে পারে তাই জন্য! তাহলে কবুতরের ক্ষেত্রে এই চিন্তা করতে বাধা কোথাই? কারন তারা মানুষ না তাই…! আমাদের অভ্যাস ভাল চাষ করব না, ভাল ফসল বুনব না, ভাল সার দিব না কিন্তু ভাল ফলন আশা করব কিভাবে? মোটকথা আমাদের মধ্যে শুকুরগুজার ভাব টা নাই।
আল্লাহ্ বলেন,”এটা এজন্যে বলা হয়, যাতে তোমরা যা হারাও তজ্জন্যে দুঃখিত না হও এবং তিনি তোমাদেরকে যা দিয়েছেন, তজ্জন্যে উল্লসিত না হও। আল্লাহ কোন উদ্ধত অহংকারীকে পছন্দ করেন না।“(সূরা আল হাদীদ ২৩)
আজ আমরা অন্য যেকোনো ব্যাবসাই ক্ষতি বরদাস করতে পারি কিন্তু কবুতরের ব্যাবসাই ক্ষতি বরদাস করতে পারি না, আর কোন কারনেই যদি হয়ে যাই সেটা আরেকজনের মাধ্যমে উঠানর চেষ্টা করি দাম বাড়িয়ে। একটা ব্যাংকে টাকা রাখলে বা কারো কাছে টাকা গচ্ছিত রাখলে যদি শুধু মুনাফার আশা করা হয় তাকে সুদ বলে, কিন্তু কবুতরের এই ক্ষেত্রে তাহলে আমরা কি বলতে পারি?
আল্লাহ্ বলেন,”তুমি বল, আমি আমার নিজের ক্ষতি কিংবা লাভেরও মালিক নই, কিন্তু আল্লাহ যা ইচ্ছা করেন। প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্যই একেকটি ওয়াদা রয়েছে, যখন তাদের সে ওয়াদা এসে পৌঁছে যাবে, তখন না একদন্ড পেছনে সরতে পারবে, না সামনে ফসকাতে পারবে। ” (সূরা ইউনুসঃআয়াত-৪৯)
আজ কবুতর পালন নেশা, পেশা, সখ কিন্তু আমরা নিজের অজান্তেই আমাদের এই এমন লোকদের জন্য জাইগা করে দিচ্ছি যারা এই খাত কে খারাপ ভাবে বা তাদের মনের মত করে ব্যাবহার করছে একচেটিয়া ব্যাবসার মত, কিন্তু মনে রাখতে হবে এটাকে কোন মোটেই শুধু ব্যাবসাতে পরিনত করতে দিয়া যাবে না।
“আর যে সম্পদকে আল্লাহ তোমাদের জীবন-যাত্রার অবলম্বন করেছেন, তা অর্বাচীনদের হাতে তুলে দিও না। বরং তা থেকে তাদেরকে খাওয়াও, পরাও এবং তাদেরকে সান্তনার বানী শোনাও।” (সূরা আন নিসা ৫)
পরিশেষে, আমারা সবাই যেন বিপদে আমাদের ধৈর্য ধারন করতে হবে, তাহলেই আমরা সফল কাম হতে পারব। আর যে জিনিসটা সবচেয়ে বড় দরকার তা হল অন্যায় এর প্রতিবাদ করতে শিখা, আপনি যদি আজ একটা অন্যায় এর প্রতিবাদ করেন হোক না সেটা ছোট তাহলেই কেবল দেখবেন আসতে আসতে এই সেক্টর থেকে অন্যায় নির্মূল হবেই হবে ইংশাআআল্লাহ।
আর আল্লাহ্ বলেন,”যখন তারা বিপদে পতিত হয়, তখন বলে, নিশ্চয় আমরা সবাই আল্লাহর জন্য এবং আমরা সবাই তাঁরই সান্নিধ্যে ফিরে যাবো।” (সূরা আল বাক্বারাহঃআয়াত-১৫৬)
(বিঃদ্রঃ সবাই কে বিশেষ ভাবে অনুরধ করছি ইনবক্স কোন ম্যাসেজ দিবেন না আর সেল ফোন ও কিছুদিন বন্ধ থাকবে। জীবনের এই পর্যায়ে এসে এক চরম সিধান্ত নিতে কিছুটা সময় দরকার। দোয়া করবেন ও সবাই ভাল থাকবেন। আল্লাহ্ হাফেয।)
মূল লেখক : সোহেল রাবি ভাই