“অতএব, আপনি মৃতদেরকে শোনাতে পারবেন না এবং বধিরকেও আহবান শোনাতে পারবেন না, যখন তারা পৃষ্ঠ প্রদর্শন করে।“ (সূরা আর-রূমঃআয়াত-৫২)
আমার জন্ম স্থান রাজশাহী পদ্মা নদীর তিরে অবস্থিত, শীত ও গ্রীষ্মে যেমন ঠাণ্ডা অপর দিকে বর্ষা ও বানের সময় সেই প্রম্মত্তা পদ্মার রূপ দেখে ভয় লাগে। এ সময় পদ্মার কূল কিনারা থাকে না। প্রচণ্ড বাতাস আর ঢেউ থাকে। এই সময় আমরা নৌকা চালান তো দূরে থাক গোসল করতেও নামতাম না নদীতে, তখন বাসার কাছে পুকুরে গোসল সেরে নিতাম। আজ থেকে ৩০ বছর আগে এমন এক সময় বিকেলের দিকে চার জন অতি উৎসাহী তরুন ঘাটে বাধা মাছ ধরার জন্য ছোট নৌকা দড়ি খুলে ভ্রমনের উদ্দেশ্যে চড়ে বসল। পারে বসে থাকা কিছু মুরুব্বি তাদের বারন করার ব্যর্থ চেষ্টা করল। বলে রাখা ভাল বিকেলে জেলেরা এইসব নৌকা গুলোর পাটাতনের উপর বাঁশের যে মাচা থাকে ও বৈঠা নিয়ে যায় যাতে কেউ নৌকা নিয়ে যেতে না পারে বা কোন দুষ্ট ছেলেরা কিছু করতে না পারে। যাই হোক সেদিন সেই ছেলে গুলো নৌকা নিয়ে লাফা লাফি করতে করতে সেই প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে মাঝ নদীতে গিয়ে ক্যাসেট ছেড়ে নাচানাচি করা শুরু করল। তাদের মধ্যে ১ জন সাতার জানত বাকী গুলো তেমন জানত না। কিন্তু সেই প্রতিকূল অবস্থায় সাতার জানা আর না জানা প্রায় সমান। তাদের সেদিন সেই জ্ঞান টুকু ছিল না যে মাচা ছাড়া পাটাতনের উপর নাচানাচি করার ফল কি হতে পারে? আর অবস্থা যখন প্রতিকূল ছিল। তাদের লাফা লাফি আর নাচানাচির এক পর্যায়ে নিচের পাটাতনের জোড়া খুলে গেল। আর পানি ঢুকে নৌকা তা চোখের পলকে ডুবে গেল। সেই ছেলে গুলো চিৎকার করতে লাগল বাঁচাও বাঁচাও বলে। কিন্তু হাজার হাজার লোক পারে দাড়িয়ে দেখতে লাগল।
সবাই অসহায় ! কে বাচাবে? যেখানে নৌকাটা ডুবেছে সেখানে গিয়ে বাঁচান ত দূরের কথা সেখানে যাবার আগেই ডুবে যাবে সেই ব্যাক্তি, সে যত বরই সাতারু হোক। যে ছেলেটি সাঁতার জানত সে স্রোতের টানে নিজেকে ভাসিয়ে দিল। আর যারা জানে না সেদিন পানি খেতে খেতে মারা গিয়েছিল। পাড়ে থাকা সেদিন এত লোক চেয়ে দেখেছিল আর অশ্রু বিসর্জন দিয়েছিল। কেউ সেই তরুণদের দোষারোপ করেছিল। কেউ মাঝিকে গালাগালি করছিল, কেউ বা পাড়ে বসে থাকা লোকদের গালাগালি করেছিল, কেন তারা গেল না তাদের বাচাতে !? কেন মাঝি নৌকা এভাবে এখানে বেঁধে রাখল। কেন তরুনরা মানা শুনল না। সেদিন যদি সেই ছেলে গুলো নিজের বাপও উপস্থিত থাক সেই বাচাতে যেত না। যাই হোক যদিও আল্লাহ্ কে ধন্যবাদ জানায় সেই মর্মান্তিক ঘটনার সাক্ষী আমি ছিলাম না। থাকলে হয়ত আর সবার মত জীবনের শেষ দিন্তি পর্যন্ত আমাকেও সেই অপারগতার দায় ভার বয়ে বেড়াতে হত।
জীবনের এতটা বছর পর হটাৎ করে আমার সেই ঘটনা মনে পড়ে গেল কেন জানি, সেদিনের ঘটনার জন্য আপনি কাকে দায়ী করবেন?! এটা অবশ্যই নির্ভর করে আপনার মানসিকতার উপর আর অবস্থার উপর ! জীবন মানুষকে প্রতিনিয়ত কিছু না কিছু শিক্ষা দিয়ে থাকে, কিন্তু আমরা খুব কমই আছে যারা সেই শিক্ষা থেকে সঠিকটা নিতে পারি। আমি যদি সেদিন উপস্থিত থাকতাম, তাহলে তাদের বাঁচানোর মত ভুল হয়ত আমিও করতাম না। আর সেটা আমার পক্ষেও সম্ভব ছিল না। যদিও বেশী জ্ঞানী লোকদের একথা বুঝান সম্ভব না কোনদিন, কোন যুগে, কোন কালে।
কবুতরের কান ও চোখের সংক্রমণ রোগ গুলোর মধ্যে
১। এক চোখ শৈত্য (One eye coldnes)
৩। কান ও চোখের সংক্রমন (Ear and Eyes Infection) ও
৪। চোখের ক্ষত (Eye lesions ) অন্যতম।
এগুলোর মধ্যে করিজা (Coriza) পরে সবচেয়ে মারাত্মক হল কান ও চোখের সংক্রমন (Ear and Eyes Infection) দুই ধরনের হয়ে থাকে। যথাঃ-
ক) ভাইরাল সংক্রমঃ
এই সংক্রমে কবুতরের অবস্থার অবনতি হয় খুব তাড়াতাড়ি আর কিছু বুঝে উঠার আগেই ৩-৪ দিনের মধ্যেই মারা যায়। ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই আপনার ভাল কবুতরের চোখ ঢেকে যাবে ও চোখের চারপাশে কাল কাল ছোপ ছোপ দাগ দেখা যাবে। চোখ পুজ ও পানিতে বন্ধ যাবে। নাকে পানি দেখা যাবে। কান দিয়ে গন্ধ যুক্ত বা গন্ধ হীন পানিতে পূর্ণ হয়ে যাবে। অনেক সময় মাথা কাপান দেখা যায়। আর এই সংক্রমনে কোন ঔষধে কাজ হয় না। আর তার সময়ও পাওয়া যায় না। তবে আই সংক্রমণের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে যাতে খামারে ছড়িয়ে পড়তে না পারে। এটিকে পিএমভি এর সংক্রমন এর প্রাথমিক বা বিকল্প লক্ষণ হিসাবে ধরা হয়ে থাকে। এটি আগে বাংলাদেশে দেখা পাওয়া যায়নি। কিন্তু গত কিছুদিনের কবুতর খামারিদের আমদানি করা কবুতরের মাঝে এই ধরনের লক্ষণ দেখা গেছে। আর আশা করা যায় এটি এখন সাধারন ভাবে আমাদেরত দেশের আবহাওয়া তে বিরাজ করতে দেখে যেতে পারে। এক্ষেত্রে কবুতর মারা যাবার পর অবশ্যই পুতে ফেলতে হবে। আর খাঁচা গুলো আগুন দিয়ে পুড়িয়ে নিতে হবে। জীবাণু নাশক দিয়ে এই রোগের জীবাণু দূর করাটা একেবারে প্রায় বলতে গেলে অসম্ভব। আমাদের মনে রাখতে হবে আমরা কবুতরের নামে শুধু যে সৌখিনতা আমদানি করছি না সেই সাথে সাধারন কবুতর খামার ও পোলট্রি খামারির দের জন্য দুঃখ ও দুর্দশাও আমদানি করছি। যা হয়ত আমাদের কে চরম মূল্য দিয়ে পরিশোধ করতে হতে পারে। কবুতরের ভ্যাকসিন এর একমাত্র প্রতিষেধক। মনে রাখবেন আমাদের দেশে ভ্যাক্সিনের নামে যে, হাঁস মুরগির ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হয় তাতে করে কোন কাজ হবে না। সেটা ভাল করে মনে রাখার চেষ্টা করবেন।
খ) ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমনঃ
এই সংক্রমনে আপনি চিকিৎসা করার সময় পাবেন। আর অবস্থার অবনতি ওই রকম ভাবে দ্রুত হবে না। ফলে আপনি চিকিৎসা করার জন্য সময় পাবেন। আর এটি নিয়ে নিন্মে আলোচনা করার প্রয়াস করলাম।
কারনঃ
১) যখন মাথার তরল ঘন রসাল পদার্থ কানের পর্দার কাছে এসে জমা হয় ও যদি বেরুতে না পারে। তখন সেটা জমে পর্দাতে আঘাত করে ও দীর্ঘদিন থাকার ফলে তা পচে সংক্রমণ ঘটে থাকে। কানের সাথে চোখের ও গলার একটা যোগাযোগ আছে টাই একটা আক্রান্ত হলে অপরি এমনিতেই আক্রান্ত হতে দেখা যায়।
২) কবুতরের গায়ের মাইট বা পোকা কানে প্রবেশ করে ও কামড়িয়ে ক্ষত তৈরি করে থাকে। আর এর ফলে কানে ও চোখে সংক্রমন ঘটে।
৩) ঠাণ্ডা বা কানে পানি যাওয়ার ফলে এই ধরনের সংক্রমন ঘটে থাকে।
৪) অন্য কবুতরের আক্রমনে যদি কানে আঘাত লাগে তাহলেও সমগক্রমন ঘটতে পারে।
৫) অনেক সময় কবুতরের গুঁড়া কৃমি, কানে ও চোখে প্রবেশ করে এগুলোর টিস্যু তে ক্ষতি সধান করে। ফলে এই সংক্রমন ঘটে।
৬) অনেক সময় চোখের অন্য রোগের কারনে বা ডিপথেরিয়ার মত রোগের কারনেও আই সংক্রমন হতে পারে।
৭) অনেক সময় কানের ভিতরে পক্স বা ফোড়ার কারনে সংক্রমণ হতে পারে।
৮) প্রচণ্ড ভিটামিন ও মিনারেলস এর অভাব। বিশেষ করে এ, সি, ডি, ই, জিঙ্ক ইত্যাদি
উপসর্গ বা লক্ষনঃ
১) কান ও চোখ হেজে যায় কান ও চোখ দিয়ে গন্ধ যুক্ত হলুদ ধরনের দুর্গন্ধ যুক্ত পানি বের হয়। চোখ ও কানে ময়লা জমে। অনেক সময় হাত দিয়ে পরিস্কার করলে সেই গন্ধ সহজে যেতে চাই না।
২) মাথা ঝাকান ও পাখার সাথে কান বা চোখ ঘসতে দেখা যায়।
৩) গায়ের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের থেকে বশি থাকবে।
৪) খাওয়া দাওয়া করবে না ও পানি পান থেকে বিরত থাকবে।
৫) সবুজ সাদা বা সবুজ পানির মত পাতলা পায়খানা করতে পারে। তবে ক্যাখানার পরিমান অনেক কম থাকে।
৬) কানের ও চোখের পাশে চটচটে ধরনের আঠাল পানি লেগে কানের বা চোখের পাশে পর ভিজে থাকতে পারে। তবে গন্ধ থাকবে।
৭) কানের ফুটা হেজে যাবার কারনে একটু বড় দেখাতে পারে। চোখের চারপাশ ফুলা থাকবে পানি নাও থাকতে পারে।
৮) হাঁটাচলা কম করবে ও লোম ফুলিয়ে বসে থাকে, এমন কি ধরতে গেলেও পালাতে চাইবে না। ব্যাথার কারনে শরীর আড়ষ্ট হয়ে যাবে।
৯) যন্ত্রণা তে অস্থির থাকার ফলে জোরে জোরে শ্বাস নিবে।
প্রতিকার ও প্রতিরোধঃ
১) উন্নত মানের মাল্টি ভিটামিন,এ, সি, ডি, ই , বি কমপ্লেক্স, সেলিনিউম ও কপার ইত্যাদি ভাল কাজ করে প্রতিরোধে ও প্রতিকারেও।
২) Orasin K তৈরি করে ১ মিলি+ Contrim ১ মিলি +ফ্লাযিল সিরাপ ১ মিলি+স্যালাইন ১ গ্রাম= ৩ মিলি পানিতে মিক্স এভাবে করে দিনে ৩ বার ৪-৫ দিন। আর রাইস স্যালাইন দিতে ভুলবেন না যেন।
৩) যদি ৩ দিনের মধ্যে কাজ না হলে Enflox-Vet Solution ৪-৫ ফোঁটা+ Contrim ১ মিলি +১ গ্রাম স্যালাইন=৩-৪ মিলি পানিতে মিক্স করে দিনে ২-৩ বার ৪-৫ দিন প্রয়োগ করতে হবে।
৪) উপরের ২ নং এর সাথে এই চিকিৎসা দিতে হবে BETRICIN-N অথবা METHASOL-N= eye/ear ড্রপ ১ ফোঁটা করে দিনে ৪-৫ বার ২ চোখে ও কানে ৫ দিন । তবে তার আগে তুলা দিয়ে পানি গুলো পরিস্কার করে নিতে হবে। তবে কানের ভিতরে তুলা বা বার দিয়ে যাবে না।
৫) যদি উপরের কোনটাতে কাজ না হয় তাহলে Bipen-Vet Injection টা প্রয়োগ করতে হবে ১ মিলি করে কবুতরের বুকের মোটা অংশে। দিনে ১ বার ৩ দিন। এক্ষেত্রে ৫ মিলি এর সিরিঞ্জ ব্যাবহার করতে হবে, তা না হলে এই ঔষধ প্রয়োগ করা যাবে না ঘনত্তের কারনে। একটা ভায়াল একবারই ব্যাবহার করা যাবে। সিরিঞ্জ একবার ব্যাবহার করে ফেলে দিবেন। এটি প্রয়োগ করলে হয় কবুতর একেবারে ভাল হয়ে যাবে অথবা চিকিৎসা করার আর প্রয়োজন নাও হতে পারে অর্থাৎ সে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মারা যাবে।
৬) একটা কাপড় দিয়ে চোখে ও কানে সেঁক দিলে এই রোগের ভাল উপকার হয়।
সতর্কতাঃ
এই রোগে কবুতর আক্রান্ত হলে আগে কবুতর কে খামারে বাইরে যেখান থেকে কোন প্রকার জীবাণু প্রবেশের সম্ভাব নাই, সেখানে নিতে হবে। চিকিৎসা চলাকালে হ্যান্ড গ্লভস ব্যাবহার করতে হবে। চড়ুই পাখি প্রবেশ বন্ধ করতে হবে। দর্শনার্থী প্রবেশ ঠেকাতে হবে ও বাইরে থেকে এসে কাপড় পরিবত্তন না করে খামারে ঢুকা যাবে না।
আমাদের আমদানি করা কবুতর কেনার ক্ষেত্রে একটু সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। শুধু লাভের আশাতে কিনে নদীর পানি ঢুকে যেন পুকুরের পানি বের না হয়ে পড়ে। আমার পোস্ট গুলো আপনাদের পথ নির্দেশনা মাত্র, বাকিটা পথ আপনি কিভাবে চলবেন সেটা আপনার থেকে ভাল আর কেউ জানে না কারণ আপনি আপনার কবুতরের খামারের অভিভাবক তাই সিধান্ত আপনাকেই নিতে হবে যে আপনি আপনার কবুতর ও খামার কিভাবে চালনা করবেন। তবে যাই করেন না কেন একটু সাধারন জ্ঞান প্রয়োগ করার চেষ্টা করবেন, কারণ স্মার্টনেস শুধু পোশাকে নয় কর্মেও প্রদর্শন করা উচিৎ। আর আপনি যদি আপনাকে দিয়ে বিচার করেন মানে এটা চিন্তা করেন যে আপনার কোন ধরনের সমস্যা হলে সে পর্যায়ে আপনি কি করতেন তাহলেই আপনার সমাধান আপনি পেয়ে যাবেন আশা করি।
পরিশেষে, “অসৎ লোক কাউকে সৎ মনে করে না, সকলকেই সে নিজের মত ভাবে।“ -হজরত আলী (রাঃ)
লেখক : সোহেল রাবি ভাই