“হে ঈমানদার গন! তোমরা পরিপূর্ণভাবে ইসলামের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাও এবং শয়তানের পদাংক অনুসরণ কর না।নিশ্চিত রূপে সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।“( (সূরা আল বাক্বারাহ:আয়াত-২০৮)
ভারতে বলিউড এ এক জনপ্রিয় মুসলিম নামধারী নায়ক এক সাক্ষাৎকার এ বলেছিল যে, সে নাকি তিরপতি মন্দিরে সপ্তাহে একদিন না গেলে সেখানে পুজা না দিলে তার ভাল লাগে না। আর সেখানে সে মানত করে অনেক মনোবাঞ্ছা পুরন হয়েছে। একথা শুনার পর ভারতের দিল্লি মসজিদের খতিব তাকে এই উপদেশ দিয়েছিলেন যে, সে যেন আবার কালেমা পড়ে নেয়। এ কথাতে সারা ভারতের মোডারেট মুসলিম দের মধ্যে সেই খতিব সাহেবের বিরুদ্ধে সমালচনার ঝড় বয়ে গেছিল।
কে বলেছে এ সব কথা, উনি কি সব জানে নাকি? উনি একজন ভণ্ড (নাউজুবিল্লাহ), উনি কিছু না জেনেই এ কথা বলেছেন। ফতোয়া দেবার উনি কে? ইত্যাদি ইত্যাদি। আমাদের দেশেও এই ধরনের মোডারেট মুসলিম দের সংখ্যা নিয়াতই কম না, কিছুদিন আগে পহেলা বৈশাখ নিয়ে সামাজিক সাইট গুলোতে এ নিয়ে অনেক পক্ষে বিপক্ষে অনেক লিখালেখি হয়েছিল। যে মূর্তি পুজা মাথাই করে নাচানাচি করা, বটগাছ পুজা করা ইত্যাদি কি ধরনের বর্ষবরণ তা আমাদের জানা নাই। আমিও এ রকম একটা পোস্ট দিয়েছিলাম আমার এক লিখাকে কেন্দ্র করে। পরের দিন এমনি এক মোডারেট মুসলিম নামধারি একজন লিখেছেন এটা কি ধরনের ফাজলামি, যে কেউ এটা করতে পারে, এতে করে যদি অশুভ শক্তি দূর হয় তাকে কি যায় আসে ? কেন এতে বাধা দিতে চায় মানুষ, এ সব মানুষ নামের কলঙ্ক এদের কে এদেশে থাকা উচিৎ না ইত্যাদি ইত্যাদি। পোস্টটা দেখে হতাস হলাম কিন্তু কষ্ট পেলাম না। হতেই পারে সবার মানসিকতা যে এক হতে হবে তা কে বলেছে।
কিন্তু আমার একটা কথা মনে পড়ে গেল একজন হুজুর বলেচ্ছিলেন যে, এক লোক বরশি ফেলে বসে আছে এক জলাশয়ে এখন কিছু ক্ষুদারত মাছ সেখানে ঘুরাফেরা করছিল। সেখানে কিছু মাছের জ্ঞান ছিল তারা কিছু যুবক মাছদের কে বলল, এই তোমরা কিন্তু সাবধান ওই খাবারের কাছে যেও না তাহলে কিন্তু বিপদ হবে। কিছু মাছ অন্যদিকে চলে গেলে কিছু গয়ার মাছে থেকে গেল, তারা বলা বলি করতে লাগল আরে বুড়ো গুলার ভীমরতিতে ধরেছে তাই এ সব কথা বলছে। কয়েকটা মাছ সেই খাবার খাওয়ার আশায় সেখানে গেল এক মাছ যেই খাবার গিলেছে অমনি চোখের পলকে অন্য মাছদের থেকে হাওয়ায় মিসে গেল কেউ কিছু বুঝতেও পারল না। তারা ভাবল এই খাবারে মনে হয় এমন কোন শক্তি আছে যা খেলে উধাও হবার শক্তি পাওয়া যায়। যে মাছ তা বরশি তে ধরা পড়ল, শিকারি সেটাকে নিয়ে গিয়ে ভাল করে টুকরো টুকরো করে কেটে লবন মরিচ দিয়ে মেখে তেলে ভাজে দুপুরে ভাতের সাথে খেতে লাগল তখন মাছটি শিকারির দাঁতে পিষ্ট হতে হতে এত যন্ত্রণা সহ্য করার পরই বুঝতে পারল কেন তার সাথিরা তাদের মানা করেছিল! কিন্তু কি আফসোস তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে যে ?!!!
ইসলামে দুমুখিতার কোন স্থান নাই। আমার অনেক সহপাঠী আছে যাদের পূজা পার্বণে আমরা সবাই যায়, তাদের বাসাতে খাওয়া দাওয়া করি কিন্তু তাদের পূজা মাথাতে নিয়ে নাচি না। কারণ তার ধর্ম তার কাছে আমার ধর্ম আমার কাছে। কিন্তু এই সহজ কথাটি এই সব মোডারেট মুসলিম দের মাথাতে আদৌ কি ঢুকবে? আল্লাহ্ আমাদের সবাইকে সঠিক পথে চলার তৌফিক দান করুন। সেই সব লোকদের কে হেদায়েত দান করুন যারা নাজায়েজ কাজকে জায়েজ মনে করে পালন করে। আমীন।
টাল বা ঘাড় পক্ষাঘাত কবুতর সেক্টরের অতি সাধারন একটি রোগ। যদিও এটিকে অনেকেই রানিখেত রোগ বা New Castle বা PMV ভাইরাস বলে ভুল করে থাকে। শুধু তাই না, কিছু খামারি ও পশু চিকিৎসক এটিকে ভাইরাল বলে গন্য করেন ও ঘোষণা দিবার পরও নানা ধরনের অ্যান্টিবায়টিক প্রয়োগের পরামর্শ দিয়া থাকেন। যা খুবই আশ্চর্য জনক। এই রোগে কোন প্রকার ঔষধ প্রয়োগে বিপরীত ফল বয়ে আনে। অনেকেই আবার মনে করেন এই রোগটি উচ্চ শক্তি সম্পন্ন ঔষধের ক্রিয়ার ফলে হয়। আসলে এই ধারনাও অমুলক, প্রতিটি প্রাণীর শরীরে ভাল ও খারাপ ব্যাকটেরিয়া থাকে। আর জীবাণুর বা খারাপ ব্যাকটেরিয়ার পরিমান যখন বেড়ে যায় চিকিৎসার বিলম্বের কারনে, তখন সেগুলো নার্ভাস সিস্টেম এ আক্রান্ত করে ফেলে, এই সময় এর প্রতিকারের ঔষধ প্রয়োগের সঙ্গে রোগের লক্ষন প্রকাশ হয়ে পড়ে। আর তার ফলে আমরা সেই ব্যাবস্থাকেই দোষী করি যেটা শেষে নিয়া হয়েছিল।
কবুতরের টাল (TAL) একটি ব্যাকটেরিয়া জনিত রোগ (Salmonellosis / Paratyphoid সংক্রমণ) দ্বারা সৃষ্ট হয়। প্রতিটি জীবন্ত প্রাণীর শরীরে সহনীয় মাত্রায় এই জীবাণু থেকে, কিন্তু সেটা যখন বেশী হয়ে যায়। তখন এটি মারাত্মক আকার ধারন করে, আর অনতিবিলম্বে এর চিকিৎসা শুরু না করলে সেই কবুতর টাল হবার সম্বাবনা বেশী থাকে। এটা কোন অঙ্গ আক্রান্ত হয়েছে তার উপর নির্ভর করে বিভিন্ন উপসর্গ দেখা যায়। বাচ্চা কবুতরের ক্ষেত্রে মৃত্যুহার খুবই বেশি তবে সময় মত চিকিৎসা ব্যাবস্থা না নিলে বড় কবুতর ও মারা যায় । তবে এই রোগে যত না জীবাণু ঘটিত কারনে মারা যায় তার থেকে পানিশূন্যতা ও খাদ্য ঘাটতি বা ক্রপ সঙ্ক্রমনে বেশী মারা যায়। Salmonellae বিশেষ ফর্ম দ্রুত খাদ্য সংক্রমনে মাধমে বেঁচে থাকে যা পাখির অন্ত্রে এই জীবাণু সংখ্যা বৃদ্ধি করতে পারে। ক্ষতিগ্রস্ত অন্ত্রের দেয়াল এর মাধ্যমে তারা রক্তধারায় সহজেই মিশে যায়। সেখান থেকে রক্ত পুরো শরীর জুড়ে রোগ বহন করে। রোগ সংক্রমণকারী জীবাণু স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে ফলে অন্ত্রে বেদনাদায়ক প্রদাহ হতে পারে। অনেক সময় কবুতরের জয়েন্ট গুলো তে ফস্কার মত দেখা যায় বা জয়েন্টগুলোতে মধ্যে ফুলে যায়। এই জয়েন্টগুলোতে তরল পদার্থের মাত্রা বৃদ্ধি পায় ও পরে সংকলন দ্বারা ক্ষীণভাবে এর প্রদাহ হয়। পায়রার দ্বারা নিজেই জয়েন্টগুলোতে মুখ দিয়ে ব্যথা উপশমের বার্থ চেষ্টা করে। এই রোগে এক সময় খামারিরা কবুতর কে জবাই করে দিয়ে ফেলে দিত বা অনেকেই খেয়ে ফেলত। একটু আশার কথা হল, এখন আর তার দরকার পড়ে না। কারণ এখন এটি চিকিৎসা অতি সহজেই করা সম্ভব, যদি আপনি সচেতন হন। আর তাই অনেক খামারি বাজার বা অন্য খামার থেকে সস্তাতে টাল কবুতর কিনে চিকিৎসা করে তা থেকে ডিম বাচ্চা করাচ্ছেন। আর এর উদাহারন নেহাত কম না। যদিও অনেকেরই এখনও ধারনা এই রোগে কখনও কবুতর ঠিক হয় না অনর্থক পরিশ্রম ইত্যাদি ইত্যাদি। আমি তাদের বলব তাদের সঠিক জ্ঞান নাই, আপনাদের জ্ঞান চক্ষু একটু মেলে ধরেন। আর এই চিকিৎসা ব্যাবস্থা অনুসরণ করেন। আশা করি আপনি ভাল ফলাফল পাবেন। অনেকেই এই চিকিৎসা থেকে ভাল ফল না পাবার কারণ হিসাবে বলা যায়ঃ
১) ঔষধ সংরক্ষন করতে পারেন না বা ঔষধ/ভায়াল ভাঙ্গার পর সেটা মুখ বন্ধ না করে সংরক্ষন করা।
২) সঠিক ভাবে প্রয়োগ করতে না পারা। অনেকেই কবুতরের বুক বলতে পাকস্থলি বুঝেন তা ঠিক না।
৩) ভাল মানের ঔষধ কিনতে ব্যর্থ হাওয়া।
৪) একই সিরিঞ্জ দিয়ে সব গুলো কে ঔষধ প্রয়োগ করা।
৫) মাতারিক্ত প্রয়োগ বা পরিমানের থেকে কম প্রয়োগ।
৬) ট্যাঁপের পানি/পুকুর বা পুরানো ডিপ টিউবওয়েল পানি সরাসরি ব্যাবহার করা বা খাওয়ান।
৭) বিভিন্ন ধরনের ক্যাসিয়াম ও ভিটামিন প্রয়োগ চিকিৎসা চলাকালীন সময়ে।
৮) এই রোগের অন্যতম চিকিৎসা হল বমি করানোর ব্যাবস্থা করা, তাই চিকিৎসা চলাকালীন সময়ে নান ধরনের বমির ঔষধ প্রয়োগ করা।
৯) কবুতর কে বড় খাঁচাতে না রাখা, বা পানি শূন্যতা রোধ না করা।
১০) চিকিৎসা চলাকালীন সময়ে অ্যান্টিবায়টিক প্রয়োগ ইত্যাদি।
রোগের কারনঃ
১) সাল্মনেল্লা এর জীবাণু আক্রান কবুতর খামারে প্রবেশ করালে।
২) বুনো পায়রা সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে ।
৩) জুতা বা পায়ের পাতার নিচের অংশে সংক্রমিত ধুলোর মাধ্যমে ।
৪) তীক্ষ্ণদন্ত প্রাণী দ্বারা সংক্রমিত হয় (যেমন ইঁদুর), তেলেপোকা ইত্যাদি এটি সংক্রামক প্রাণী দ্বারাও এ রোগ উত্পাদিত হতে পারে।
৪) খাদ্য বিষক্রিয়াগত কারনে, দূষিত মাটি বা জল থেকে, তেলাপোকা বা খাদ্য থেকে বা আক্রান্ত একটি প্রাণীর থেকে খাদ্য খাওয়া, লালা, বায়ু, কাশি ইত্যাদি থেকেও হতে পারে।
৫) নতুন পায়রা খামারে প্রবর্তনের মাধ্যমে হতে পারে।
৬) সংক্রমিত মলের মাধ্যমে সংক্রমিত হতে পারে।
৭) বাইরের পাখি খামারে অবাধ প্রবেশ বা খামারের কবুতর বাইরের কবুতরের সংস্পর্শে ।
৮) খামার পানির পাত্রে পায়খানা করলে সেই পানি যথা সময়ে না সরিয়ে নিলে সেই পানি পান করলে এই রোগ ছড়াবে।
৯) সরাসরি ট্যাঁপ/নদী পুকুর বা জীবাণু যুক্ত পানি সরবরাহ করলে।
১০) আক্রান্ত কবুতরের সংস্পর্শে, এই রোগ ১৫ দিন পর্যন্ত জীবাণু ছড়াতে পারে। যদিও অনেকেই এই ধারনার সাথে দ্বিমত পোষণ করে থাকেন।
লক্ষণঃ
১) গাড় সবুজ পায়খানা বা সবুজ ও সাদা পায়খানা বা পাতলা সবুজ বা পাতলা সবুজ ও সাদা পায়খানা ।(অথবা সবুজাভ মল, আমাশয় ভাব, সবুজাভ পাতলা মল)
২) অধিকাংশ প্রাপ্তবয়স্ক পাখি কিছুটা শিথিল হয়ে যাবে ও দ্রুত ওজন কমে যাবে ও বুকের হাড্ডি বের হয়ে যাবে।
৩) পায়ের সন্ধি/জয়েন্ট বা পায়ে ফুলে যেতে পারে।
৪) গরূৎ বা গরল boils হতে পারে যা কবুতরের গায়ে ফোস্কা বা ফোড়া বা গতার মত দেখা যেতে পারে।
৫) বমি ভাব বা বমি করবে। খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে খাঁচার এককোণে চুপ করে লোম ফুলিয়ে বা এক পা উচু করে অথবা গায়ে মুখ গুঁজে বসে থাকবে।
৬) বাচ্চা কবুতর প্রায়ই শ্বাস সমস্যা দেখা দিতে পারে বা ডিম ফুটার পরে দ্বিতীয় সপ্তাহ আগে বাচ্চা মারা যেতে পারে অথবা ডিমের মধ্যে মৃত্যুর আরেকটি উপসর্গ হতে পারে। অথবা অনুউর্বর ডিম। এই রোগে ভিটামিন D শোষিত হয় না। কিন্তু তারপরও অনেকেই না ধরনের ক্যালসিয়াম প্রয়োগ করে ত্থাকেন।
৮) এই রোগে বা অবস্থায় খাদ্য থেকে পুষ্টি না পেয়ে কবুতর দিন দিন খুব দুর্বল হয়ে মারা যেতে পারে ।
৯) কবুতরের পাখা ঝূলে যেতে পারে, ঝিমানো,খাদ্য না খাওয়া, দ্রুত চিকিৎসা না করলে ৪/৫ দিনের মধ্যে কবুতর মারা যেতে পারে ।
১০) প্রচণ্ড বমি করা ও সবুজ ধরনের বমি করা।
১০) এই রোগে শক্ত খাদ্য হজমে সমস্যা হয় বা খাবার খেতে পারেন না।
১১) বর্ষা ও শীতে এই রোগের দিব্রতা বা প্রকপ বেশি হয়।
১২) ঘাড় বেকে যাওয়া বা মুচড়ান বা ঘাড় উল্টে যাওয়া বা ভুতের মত মাথা ঘুরান বা মাথা কাপতে থাকা ইত্যাদি।
১৩) উল্টে পড়ে যাওয়া বা খাবারের সঠিক জায়গায় ঠোকর দিতে না পারে। বাকা ভাবে উড়া বা উড়তে গিয়ে পড়ে যাওয়া। একই জায়গায় ঘুরে তে থাকা বা হাঁটার সময় শরীরের ভারসাম্য না থাকা বা হাঁটতে গিয়ে আরও সাথে বারি খাওয়া ইত্যাদি।
১৪) মাথা কাপতে থাকা বা একই জায়গায় ঘুরতে থাকা এই রোগের সবচেয়ে খারাপ পর্যায় এটি তে চিকিৎসা ব্যাবস্থা একটু দীর্ঘ করতে হয় অর্থাৎ ১৫ দিন পর্যন্ত চিকিৎসা চালানর পর ১০-১৫ দিন বিরতি দিয়ে আবার চিকিৎসা চালান। এইভাবে অনেকদিন চিকিৎসা চালাতে হয়।
চিকিত্সা/প্রতিকার ও প্রতিরোধঃ
১) সাল্মনেল্লা এর প্রতিরোধের ব্যাবস্থা করা।
২) নিয়মিত বি কমপ্লেক্স প্রয়োগ করতে হবে। আর সেটি যেন অবশ্যই প্রতি মাসে ৫ দিন আপনার দৈনন্দিন তালিকাতে থাকে। মনে রাখবেন বি কমপ্লেক্স শরীরে জমা থাকে না এটি ৩০%-৪০% শরীর শোষণ করে বাকিটুকু পায়খানার সাথে বের হয়ে যায়। দ্বিতীয়ত কবুতর টাল রোগে এক্রান্ত হলে যেহেতু কবুতরের হজম শক্তি কমে যায় তাই এ অবস্থায় কোন প্রকার ভিটামিন ও মিনারেলস না দিয়া ভাল। আর যেহেতু এই রোগে প্রতিরোধ ও প্রতিকারের অন্যতম উপাদান বি কমপ্লেক্স তাই ভাল মানের ওষুধ প্রয়োগ করার চেষ্টা করেবেন। আর আক্রান্ত কবুতর কে বি কমপ্লেক্স খাওয়ানোর থেকে পুশ করা অনেক বেশী কার্যকরী।
৩) লেবু+লবন পানি বা অ্যাপেল সিডার ভিনেগার আপনার কবুতর খামারের ছকে যেন স্থান থাকে ১-২ দিন প্রতি মাসে।
৪) খামার প্রতিদিন বা একদিন পর পর বা অন্তত পক্ষে সপ্তাহে ২ দিন পরিস্কার করে জীবাণু মুক্তকারী ঔষধ ছিটান উচিৎ।
৫) খাবার অবশ্যই পরিস্কার করতে হবে আর ১৫ দিন পর পর সম্ভব হলে চুলাতে হালকা গরম করে ঠাণ্ডা ভাবে খাবার সংরক্ষণ করতে হবে।
৬) প্রতিদিন দিনে দুই থেকে তিন বার আক্রান্ত কবুতরটির ঘার হালকা ভাবে ধীরেধীরে মালিশ করে দিন।
৭) আক্রান্ত কবুতর কে তরল জাতীয় খাবার খাওয়ান ও সম্ভব হলে হালকা গরম পানি সহযোগে লম্বা নল যুক্ত ফিডারের সাহায্যে খাওয়ান। রাইস স্যালাইন দিতে পারেন কুসুম গরম অবস্থায় ৫-১০ মিলি করে। এতে আপনার কবুতরের পানিশূন্যতা কমে যাবে। অনেকের ধারনা যে যে সব কবুতর খাওয়া দাওয়া করে সেগুলো কে এটি দিবার কি দরকার? আসলেই তারা জানেন না বলেই এই ধারনা পোষণ করে থাকেন। রাইস স্যালাইন একদিকে যেমন খাবারের অভাব পুরন করবে তেমনি পানিশূন্যতা কমাতে সাহায্য করবে যেটা আপনার কবুতরের জন্য বেশী জরুরী।
৮) আক্রান্ত কবুতর নিয়মিত রোদে দিন কমপক্ষে ১ ঘণ্টা করে।
৯) প্রতিদিন খাঁচা পরিষ্কার করুন প্রয়োজনে খাঁচায় ছালা বা কাপড় বিছিয়ে দিন।
১০) আক্রান্ত পাখিটিকে লফ্টের অন্যান্য পাখি থেকে আলাদা রাখুন ।
১১) Neuro B বা Neurobion বা Neuraljin বা Thovit etc ইঞ্জেক্সন ইনসুলিন সিরিঞ্জ , ১ সিসির তিন ভাগের ১ ভাগ অর্থাৎ ইনসুলিন ১০০ ইউনিট সিরিঞ্জের ৩০ ইউনিট থেকে ৩৫ ইউনিট করে বুকের মোটা গোস্তে প্রয়োগ করেতে হবে। প্রতিদিন সকালে দিনে ১ বার করে ১০ থেকে ১৫ দিন। এটি প্রয়োগ করার ফলে বমির উপসর্গ হতে পারে কিন্তু পরে আস্তে আস্তে তা ঠিক হয়ে যাবে। আর যেহেতু বমি করান এই রোগের অন্যতম চিকিৎসা তাই এক্ষেত্রে কোন প্রকার বমি ঔষধ প্রয়োগ করা যাবে না। এটি সকালে খালি পেটে প্রয়োগ করা ভাল। এই ঔষধটি কবুতরের একমাত্র সফল ও কার্যকরী ঔষধ এই রোগ ভাল করার জন্য।
১২) হোমিও Cal. Phos. 12X ট্যাবলেট দিনে ১-২ টা করে দিতে খাওয়াতে পারেন। সহযোগী ঔষধ হিসাবে।
১৩) এই রোগের ইঞ্জেক্সন এর কোর্স শেষ হয়ে যাবার পর ৭ দিন কডলিভার অয়েল ১ টা করে খাওয়াবেন।
সতর্কতাঃ
১) এই রোগের প্রথম ৭-১০ দিন গাড় সবুজ ধরনের পায়খানা করে ফলে অনেকেই অ্যান্টিবায়টিক প্রয়োগ শুরু করে দেন। এটি খুবই মারাত্মক এটি কখনও করবেন না অনুগ্রহ করে।
২) ইঞ্জেক্সন প্রয়োগের মাত্রা যেন কোন মতেই ৩৫ ইউনিট এর বেশী না হয়। কারণ এটি হলে কবুতরের হিট স্ট্রোক হবার সম্ভাবনা অনেক বেশী থাকে।
৩) কবুতর যদি ডিপথেরিয়াতে আক্রান্ত হয়ে টাল হয় বা অনেক রোগের লক্ষন থাকে তাহলে ইঞ্জেক্সন দিয়া থেকে দূরে থাকুন এ পর্যায়ে আগে সেই রোগটি নির্মূল করতে হবে পড়ে টাল এর চিকিৎসা করবেন।
৪) কুবতরের পাখনার সংযোগ স্থলে বা জয়েন্টের যে পয়েন্ট সেখানে প্রয়োগ করবেন না। তাহলে আপনার কবুতরের জীবনের মায়া তৎক্ষণাৎ পরিত্যাগ করতে হতে পারে।
৫) তরল কোন খামার প্রদান কালে খেয়াল রাখবেন পরিমান টা যেন বেশী না হয় বা প্রয়োগ কালে নাক মুখ দিয়ে যেন বের না হয়ে আসে। মনে রাখতে হবে কবুতর না খেয়ে মরে না খেয়ে মরে।
এই রোগটি তেমন মারাত্মক কিছু না। এই রোগটি খামারের ব্যাবস্থার উপর নির্ভর করে অর্থাৎ আপনি কততুকু সচেতন খামারি সেটাই নির্দেশ করে। আর দ্বিতীয়টি আপনার কততুকু ধৈর্য আছে সেটার একটা চরম পরীক্ষা হয়ে যায়। মানুষের শরীরে চুলকানি যেমন তার অসচেতনতা ও নোংরা স্বাস্থ্য ব্যাবস্থাপনা নির্দেশ করে তেমনি সাল্মনিল্লা ও টাল রোগ একটি খামারের তেমন ব্যাবস্থাপনার নির্দেশ করে থাকে। মনে রাখবেন এই রোগ থেকে ১০০% আরোগ্য সম্ভব যদি আপনি সঠিক ভাবে চিকিৎসা করেন। আর একথাটি কতটুকু সত্য সেই সব সচেতন কবুতর খামারিরা জানেন যারা এর ব্যাবহার সঠিক ভাবে করেছেন। এর থেকে উপকৃত হয়ে আর এই রোগ থেকে একটি কবুতর ভাল হয়ে গেলে। তার ডিম বাচ্চা করার প্রবনতা ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক গুন বেড়ে যায়। প্রতিকার থেকে প্রতিরোধ ভাল আর সে জন্যই আপনি সব সময় খেয়াল রাখবেন যেন এই রোগটি থেকে আপনার কবুতর সব সময় নিরাপদ থাকে।
পরিশেষে কোরআন একটি আয়াত দিয়ে শেষ করতে চাই আল্লাহ্ বলেন, “যে ব্যক্তি ইহকালে অন্ধ ছিল সে পরকালেও অন্ধ এবং অধিকতর পথভ্রান্ত।“ (সূরা বনী ইসরাঈলঃআয়াত-৭২)
লেখক : সোহেল রাবি ভাই