কবুতরের সাধারন সমস্যা ও চিকিৎসা

“বস্তুতঃ ফেতনা ফ্যাসাদ বা দাঙ্গা-হাঙ্গামা সৃষ্টি করা হত্যার চেয়েও কঠিন অপরাধ।” (সূরা বাকারাহঃআয়াত-১৯১)

একবার আমার এক সাথী বললেন যে, তিনি এক তথাকথিত পীর সাহেবের বাড়িতে সন্ধ্যার সময় গেলেন। দেখলেন পীর সাহেব আয়েস করে সোফাতে আধা শায়িত অবস্থায় টিভিতে হিন্দি চ্যানেলে গান দেখছেন। এর মধ্যেই মাগরিবের আযান দিলে। পীর সাহেব শিলা কি জওয়ানি… দেখতে থাকলেন। তার এক খাস মুরিদ কে জিজ্ঞাস করা হল যে পীর সাহেব কি নামাজে যাবেন না। মুরিদ তাড়াতাড়ি জিব কেটে উত্তর দিল বেয়াদবি করেন না। আপনি জানেন পীর সাহেব এ খানে বসে আছেন ঠিকই কিন্তু মক্কা তে ইতিমদ্দেই তার আত্মা নামাজ পড়তে চলে গেছে! (নাউজুবিল্লা।)

এটাই তো উনাদের ভেল্কি এ সব কারিশমা নাকি সাধারন মানুষ বুঝতে পারবে না ইত্যাদি ইত্যাদি নানা ধরনের তার কারিশমা সম্পর্কে বুঝাতে লাগল। উনার কারিশমা আর বুঝার দরকার নাই যা বুঝার বুজা হয়ে গেছে। কিছু পীর সাহেবরা কোরআনের আয়াত এর কিছু অংশ তুলে ধরেন, যেমনঃ “হে ঈমাণদারগণ! তোমরা যখন নেশাগ্রস্ত থাক, তখন নামাযের ধারে-কাছেও যেওনা, যতক্ষণ না বুঝতে সক্ষম হও যা কিছু তোমরা বলছ, আর (নামাযের কাছে যেও না) ফরয গোসলের আবস্থায়ও যতক্ষণ না গোসল করে নাও।” (সূরা আন নিসাঃআয়াত-৪৩) এই আয়াতের কিছু অংশ তুলে ধরে বলে যে তাদের কে আল্লাহ্‌ নামাজে ছার দিয়েছেন বাঁ আল্লাহ্‌ ওদেরকে নামাজ পড়তে নিষেধ করেছে। কিছুদিন আগে এক মজলিসে একজন আরেকজনের সাথে প্রচণ্ড ঝগড়া, আমি যখন সেখানে উপস্থিত হলাম তখন প্রায় হাতাহাতি হবার উপক্রম। জিজ্ঞাস করলাম ভাই কি হয়েছে, জানা গেল যে, প্রথম ব্যাক্তি দাবি করছে যে কোরআনে কোথাও নামাজের কথা বলা হয়নি। ভ্রু কুচকে গেল মাথার চুলখাড়া হয়ে গেল। বুঝলাম এটি জ্ঞান পাপী। তার কথা সত্য কোরআনে নামাজ বলে কোন শব্দ নাই। সালাত বলা আছে। কিন্তু আমার অভিজ্ঞতা থেকে জানি এসব লোককে বুঝাতে গেলেও বুঝবে না। তারপরও একটু বৃথা চেষ্টা করলাম, আর ফলাফল একই হল।

ফেতনা ও বেদাতে ভরে গেছে। যায় হোক কিছুদিন আগে সামাজিক সাইটে কয়েকটি লিখাতে চোখ আঁটকে গেল। একজন লিখেছেন যে, সুন্নত নামাজ জরুরী না খালি ফরজ নামাজ পড়লেই চলবে। আরেক জন লিখেছেন যে জুম্মার নামাজের আগে ও পড়ে কোন সুন্নত নামাজ নাই। শুধুমাত্র তাহিয়্যাতুল ওযুর নামাজ পরলেই হবে। এ জন্যই হয়ত ইদানিং অধিকাংশ মুসুল্লি খুদবার পর আসে ২ রাকাত ফরজ পড়ে চলে যায়। এমনকি অনেকেই আছেন শেষ বৈঠকে এসে নামাজ আদায় করেন খুদবা শুনার প্রয়োজন মনে করেন না। কিন্তু জুম্মা ও ঈদের খুদবা শুনা ওয়াজিব। এক মসজিদে দেখলাম ইমাম সাহেব সালাম ফিরাচ্ছেন পুরাটা না হালকা করে, উনাদের মাসালা হল সালাম এর সময় ঘাড় নাকি পুরাটা ফেরাতে হয় না!!! মাথা টা হালকা করে ফেরালেই হয়।

ঈদের সময় আমরা ছোট বেলা থেকে কুলাকুলি করে এসেছি বাঁ দিক থেকে শুরু বাঁ দিকেই শেষ তিন বার, এর পর জানলাম না ২ বার করতে হয় ডান দিক থেকে ডান দিকে শেষ, এর পর শুনলাম যে না, এক বার করে এর শেষে শুনলাম যে না কুলাকুলি করার কোন বিধান নাই ইসলামে শুধু হ্যান্ডসেঁক করলেই হয়! বুঝতে বাকী থাকে না কিভাবে এগুলো এসেছে আর কি বাঁ তাদের উদ্দেশ্য। কিছুদিন আগে মাগরিব এর আজানের সময় এক লোক নামাজে দাড়িয়ে গেলেন নামাজ শেষে করে তার পাশের একজন জিজ্ঞাস করলেন কিসের নামাজ পড়লেন? তিনি উত্তর দিলেন মাগরেবের ২ রাকাত সুন্নত। অন্য ভাই বললেন ভাই এ সময় তো নামাজের সময় না আর সুন্নত তো ফরজের পরে। তর্ক লেগে গেল। আমি তাদের থামিয়ে দিলাম কারণ যারা জেগে ঘুমায় তাদের জাগান কি সম্ভব? কিছু লোকদের কে এসব কথা বুঝান মুশকিল। কি বলবেন? আর কোথাই যাবেন?

ইদানিং কিছু ইসলামের নকাম ধারি কিছু লোকের অনুসারী উস্কানি মুলক কথাবার্তা বলতেছে, যেমন তারা যাকে কাফের বলবেন তারাই কাফের, তারা যাকে মুনাফেক বলবে তারাই মুনাফেক। অথচ এ ব্যাপারে কঠোর নিষেধাজ্ঞা এসেছে তার পরও, এই ধরনের লোকরা কথায় কথায় মানুষ হত্যা করার জন্য উস্কানি দেয়। যেখানে ফেরাউন এর মত জালেম কে আল্লাহ্‌ হত্যার জন্য বলেন নাই, সেখানে আমার এদের বিচার করার কে? এমনিতেই কিছু জুম্মা মুসুল্লি নামাজের শেষে এসে সবার গায়ে ও মাথায় পা দিয়ে সামনে যাবে আর সালাম ফিরানর বাঁ মুনাজাত এর পর পরই বের হয়ে আসার চেষ্টা করবে আর এ সময় যদি কেউ কাতারে নামাজ পড়তে থাকে তাহলে সেই সব মুসুল্লিদের মেজাজ গরম হয়ে যাবে। আরে এত নামাজ পড়ে নাকি বাসাতে গিয়ে পরলেই পারে ইত্যাদি ইত্যাদি নানা ধরনের কথাতে জর্জরিত করেন আরেকজন মুসুল্লিদের। আর এ ভাবেই চলতেছে চলবে। আর এমন ভাবেই হয়ত একদিন ফতোয়া আসবে যে নামাজ পড়া জরুরী না। (নাউজুবিল্লাহ) এমন এগুলো ব্যখ্যাতে আমি যাব না এখানে। রসুলুল্লাহ(সাঃ) বলেছেন শেষ জামানায় দাজ্জালের ফেতনা থেকে বাচার জন্য আল্লাহ্‌ কাছে পানাহ চাইতে, দোয়াটি এ রকম, “ হে আল্লাহ্‌ আমি আপনার কাছে জীবন-মৃত্যুর ফেতনা থেকে ও মসীহ দাজ্জালের ফেতনা থেকে আশ্রয় প্রাথনা করছি।”

জীবনের নানা ধরনের ফেতনার মত কবুতর সেক্টরের ফেতনা নেহাতই কম না। এখানে এক এক জন এক একটা মতামত ও উপদেশ দিয়ে ফেলেন না জেনে না বুঝে, আর তাদের কে সেটা যুক্তি দিয়ে বুঝান সম্ভব না। আগের সময় বলা হত গর্ভবতী মেয়েদের কে মাছ-গোস্ত খাওয়াতে হয় না, এটা খাওয়াতে হয় না সেটা খাওয়াতে হয় না, বাচ্চাদের শাল দুধ খাওয়াতে হয় না। সময়ের সাথে সাথে সেই সব চিন্তা ধারা বদলেছে। কিন্তু কবুতর সেক্টরের চিন্তাধারা এখনও আদিম যুগের মতই রয়ে গেছে। এখনও বলে গরমের দিনে কবুতর কে ভিটামিন মিনারেলস দিতে হয় না। বাচ্চা থাকলে ভিটামিন খাওয়াতে হয় না এটা করতে হয় না ওটা করতে হয় না ইত্যাদি একেবারে অতিষ্ঠ হয়ে যাবার মত অবস্থা এ সব লোকজন জানেনই না যে কবুতর তার বাচ্চা কে যখন ১০ দিন পর্যন্ত সরাসরি কোন খাবার দেয় না। তাদের কর্প মিল্ক খাওয়াই ফলে এ সময় তাদের ভিটামিন ও মিনারেলস বেশী দরকার পড়ে দুধ হবার জন্য। কিন্তু কাকে বুঝাবেন?

ছোট বেলায় যখন বানরের তৈলাক্ত বাঁশে উঠার অংক টা করতাম তখন এই অংক যে তৈরি করেছিল, তার প্রতি করুনা হত যে লোকটার মাথাতে মনে হয় কিছুই নাই। কিন্তু জীবনের এত বছর পর এসে বুঝলাম আসলে তিনিই সঠিক ছিলেন। কারণ আমাদের দেশে এই ধরনের অংকের খুবই দরকার। আর এ জন্যই হয়ত বলা হয় প্রথম শ্রেনির বিশ্ব থেকে আমরা একশ বছর পিছিয়ে আছি! কবুতর জগতের কিছু অতি সাধারন অথচ প্রাথমিক কিছু সমস্যার আমারা প্রতিনিয়ত সম্মুখীন হচ্ছি, আর এগুলো যদি তৎক্ষণাৎ ব্যবস্থা না নিলে ফলাফল মারাত্মক হতে পারে, সেই রকমই কিছু সমস্যা ও সমাধান নিয়ে আলোচনাঃ

*ক্ষত/আঘাত জনিত রক্তপাত:

সাধারনত বিভিন্ন কারনে কবুতরের রক্তপাত হতে পারে আর সেটা বিড়ালের কামড়, পালক তুলতে, খাঁচার কারনে কেটে যাওয়া, নখ কাটতে, ঠোঁট ভেঙ্গে গেলে, বাজ পাখির আঘাত ইত্যাদি। যে কারনেই হোক না কেন সব ক্ষেত্রেই ব্যাপারটা কে একটু গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা ও একটু আলাদা খেয়াল রাখতে হবে, কারন কবুতরের রক্তপাত একবার শুরু হলে সহজে বন্ধ হয় না।

কবুতরের বেশী পরিমানে রক্ত পাতের হলে কবুতরের মাথা ঢলে পড়া, চোখ বন্ধ করে মনে হবে মারা যাচ্ছে। এই সময়ই যদি পরীক্ষা করার জন্য কবুতর কে ধরার সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন বুকে চাপ না পরে বা হালকা করে ধরতে হবে, কারন এই সময় তাদের প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট হয়। এর যদি ভাল করে ধরা না হয়ই তবে মারা যাবার সম্ভবনা থাকে।

প্রথমে রক্তপাত বন্ধের জন্য জরুরী পদক্ষপ নিন, যেমনঃ রক্তপাতের জায়গায় সেভলন ক্রিম লাগান বা কোন অ্যান্টিসেপটিক দিয়ে কাটা স্থান চেপে ধরুন। বরফ বাঁ ফিটকারি দিয়ে রক্ত রোধ করার ব্যাবস্থা করুন। রক্ত বন্ধ হলে ভাল করে জীবাণু মুক্ত (যেমন হেক্সিসল বা অন্য কোন জীবাণু নাশক দেয়ে পরিস্কার করে, অ্যান্টিসেপটিক দিয়ে বেঁধে দিন।) রক্তপাত পুনরারম্ভ না নিশ্চিত হতে কয়েক ঘন্টায় আপনার কবুতরের উপর নজর রাখুন। যদি ক্ষত বেশি গভীর হয় তাহলে অভিজ্ঞ কারো সাহায্য নিতে হবে সেলাই এর জন্য। ঠোঁটের আঘাত বেদনাদায়ক হতে পারে এবং এই পাখি সাধারণত খেতে পারেন না তাই একে নরম খাদ্য প্রদান করার প্রয়োজন হতে পারে। পালক তুলার ব্যাপারে বেশি খেয়াল রাখতে হবে নতুন পালক তুলতে গেলে এই ধরনের ঘটনা বেশি ঘটতে পারে।

চিকিৎসাঃ

  • রক্ত পরিস্কার এর জন্য হেক্সিসল ব্যবহার করুন,তার আগে নিজের হাতে মেখে নিন।
  • যেকোনো অ্যান্টিসেপটিক লোশান্ বা জেল বা পাওডার অথবা ক্রিম ব্যবহার করুন।
  • Hipericum 200 হোমিও খাওয়াতে হবে ১ ফোঁটা করে ১০ মিনিট পর পর ৭-৮ বার এতে সংক্রমন বাঁ ধনুষ্টংকার থেকে বেচে যাবে আপনার পাখি বাঁ কবুতর
    Beledona 30 হোমিও খাওয়াতে হবে ১ ফোটা করে দিনে ৩-৪ বার দিতে পারেন যদি গায়ে তাপমাত্রা বেশী থাকে।
  • Arnicamont 30 হোমিও খাওয়াতে হবে ১ ফোটা করে দিনে ৩-৪ বার দিতে পারেন যদি গায়ে তাপমাত্রা স্বাভাবিক থাকে।
  • ইঁদুর/বিড়াল/মৌমাছি/ বোলতা বা বিষাক্ত কিছুতে কামড়ালে রক্ত পরিস্কারক হিসাবে হোমিও Echinesia Mother ২-৩ ফোঁটা করে দিনে ৪-৫ বার ৫-৬ দিন খাওয়ালে ভাল ফল পাওয়া যায়। এ ক্ষেত্রে আগে Hipericum 200 হোমিও খাওয়ালে ধনুষ্টংকারের ভয় থাকে না।
  • আঘাতের স্থান প্রতিদিন পরিস্কার করুন ও খেয়াল রাখুন।

আপনি যদি এ ব্যাপারে গুরুত্ত না দেন তাহলে হয়তো আপনার কবুতরের অপুরণীয় ক্ষতি হতে পারে।

**হাড়ভাঙ্গাঃ

অনেক সময় উপর থেকে পড়ে, কোথাও বারি লেগে, খাঁচার ফাকে পা আঁটকে, বাঁ ভয়ে খাঁচার ভিতরে লাফা লাফি করে আঘাত লেগে আংশিক বাঁ সম্পূর্ণ হার ভেঙ্গে যেতে পারে।

ক) অসম্পূর্ণ হার ভাঙ্গা তিন ধরনের

  • হাড় কাস্তের মত বাকা হয়ে যাওয়া। (যদিও এটি ভিটামিন-মিনারেলস ও লবনের ঘাটতির কারনে হয়ে থাকে।)
  • খুব জোরে আঘাত লেগে বা Air Gun এর গুলিতে হাড়ের কিছু অংশ খসে পড়ে যেতে পারে। ও
  • বিভিন্ন ভাবে আঘাত লেগে হারে চিড় ধরতে পারে।

(খ) সম্পূর্ণ হাড় ভাঙ্গাঃ

হাড়ের কোন অংশ যদি দুই ভাগে ভাগ হয়ে যায় তাহলে সেটিকে সম্পূর্ণ ভাঙ্গা বলে।

কারনঃ
১) ভিটামিন-মিনারেলস ও লবনের অভাবে হাড় বেকে যায় ও কবুতর হাঁটতে পারে না।
২) ভিটামিন-মিনারেলস ও লবনের অভাবে হাড় মুড়মুড়ে হয়ে যায় ফলে একটু আগাত লাগলেই ভেঙ্গে যায়।
৩) শিকারির গুলিতে বা উপর থেকে পড়ে বা লাঠির/ইটের আঘাতে বা খাঁচাতে লাফালাফি করে আঘাত লেগে বা খাঁচার ফাকে পা ঢুকে হাড় সম্পূর্ণ রূপে ভেঙ্গে যেতে পারে।

লক্ষণঃ
১) ভাঙ্গা জায়গাটি ফুলে যাবে ও নাড়াতে পারবে না। আকার  পরিবর্তন হতে দেখা যাবে।
২) জায়গাটি কালচে আকার ধারন করবে যদি আঘাত জনিত হয়।
৩) কবুতর একেবারেই হাটা চলা করতে পারবে না।
৪) যদি সম্পূর্ণ ভেঙ্গে যায় তাহলে সেটি ভাগ হতে দেখা যাবে।
৫) পাখি বা কবুতর ব্যাথায় ছটফট করবে এমন কি জায়গাটি তে হাত দিলে দানা ঝাপটিয়ে প্রকাশ করবে।
৬) অনেক সময় বমির ভাব দেখা যায়।

করনীয়ঃ

যেখানে হাড় ভেঙ্গেছে সেখানে দুই জায়গা টেনে মুখ কাছাকাছি এনে দাবিয়ে জায়গা মুখ লাগিয়ে দিতে হবে। ভাঙ্গা হাড়ের চার পাশে মোটা তুলার প্রলেপ দিয়ে চার পাশে ৩-৪ টি মসৃণ কাঠ বা বাঁশের টুকরো লাগিয়ে ব্যান্ডেজ জরিয়ে দিতে হবে। যেন বেশী শক্ত বা বেশী আলগা না হয়। পারলে প্লাস্টার অফ প্যারিস যেটি ফার্মাসি তে পাওয়া যায়। পানি দিয়ে গুলে মাখান অবস্থা তার উপর প্রলেপ দিতে হবে। দিতেই হবে এমন কোন বাধ্য বাধকতা নাই। খেয়াল রাখতে হবে ভিতর টি যেন ভিজে না থাকে তাহলে সংক্রমণ হবার ভয় থেকে যায়। ব্যান্ডেজ ২১-৪০ দিন পর্যন্ত রাখতে হবে। খাঁচার নিচে কাঠ বা বস্থা দিয়ে দিতে হবে যাতে বসে থাকতে পারে। এই সময় তরল জাতীয় খাবার ও ক্যালসিয়াম+ ডি+ফসফরাস সরবরাহ করতে হবে যাতে হাড় তাড়াতাড়ি জোড়া নেয়। প্রাথমিক অবস্থা বরফ লাগালেও ব্যাথা উপশম হয়। এর পর হেক্সিসল বা হোমিও ক্যালেন্দুলা মাদার তুলা দিয়ে জায়গাটা ভাল করে মুছে দিতে হবে।

চিকিৎসাঃ

১) হোমিও Symphytum সিম্ফাইটম বা সিম্ফাইটস ১-২ ফোঁটা করে দিনে ৩-৪ বার ৭-১০ দিন খাওয়াতে হবে। অথবা Cal Phos 12x ১-২ টি ট্যাবলেট দিনে ২-৩ বার ৭ দিন খাওয়ান যেতে পারে।
২) Arnicamont 30 হোমিও খাওয়াতে হবে ১ ফোটা করে দিনে ৩-৪ বার দিতে পারেন যদি গায়ে তাপমাত্রা স্বাভাবিক থাকে ।এটি ব্যাথা নিবারনে সাহায্য করবে।
৩) Orasin K তৈরি করে ১ মিলি+স্যালাইন ১ গ্রাম = ৩ মিলি পানিতে মিক্স এভাবে করে দিনে ৩ বার ৪-৫ দিন। আর রাইস স্যালাইন ৪-৫ মিলি করে ঔষধ দিবার ১ ঘণ্টা আগে দিতে ভুলবেন না। এটি শুধু সংক্রামণের ভয় যদি থাকে সে ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা যেতে পারে।
৪) Calbo D/Cal D (Human) ১/৪ ভাগ করে দিনে ২ বার করে দিবেন, বি কমপ্লেক্স সাথে যোগ করলে ভাল ফল পাওয়া যায়। এই পথ্য হাড় জয়েন্ট না নিয়ে পর্যন্ত চালিয়ে যেতে হবে।

এক্ষেত্রে নিয়মিত পরিচর্যা ও খেয়াল রাখতে হবে যাতে কবুতর বেশী লাফা লাফি না করে, মাঝে মাঝে ভাঙ্গা জায়গাটি হাত দিয়ে দেখতে হবে যে হাড় এর স্থান চ্যুতি ঘটেছে কিনা।

***ফোঁড়াঃ

কবুতরের গায়ে গোটা গোটা বড় হলুদ চারপাশে লাল, মুখযুক্ত কোন ঘা দেখা গেলে সেটি ফোঁড়া হিসাবে বিবেচনা করা যেতে পারে। তবে ফোঁড়া ও পক্স কে এক করা যাবে না। পক্স এর কোন মুখ থাকবে না এর এর আকার ছোট হবে।

চিকিৎসা ও পরিচর্যাঃ

১) ফোঁড়ার গায়ে নিয়মিত হেক্সিসল/ হেক্সিসল বা হোমিও ক্যালেন্দুলা মাদার বা পালসেটিলা মাদার তুলাতে লাগিয়ে জায়গাটা ভাল করে মুছে দিতে হবে।
২) উন্নত মানের সি+ বি কমপ্লেক্স ভাল কাজ করে প্রতিকারে।
৩) Orasin K তৈরি করে ১ মিলি+ Contrim ১ মিলি +ফ্লাযিল সিরাপ ১ মিলি+স্যালাইন ১ গ্রাম = ৩ মিলি পানিতে মিক্স এভাবে করে দিনে ৩ বার ৪-৫ দিন। আর রাইস স্যালাইন দিতে ভুলবেন না যেন।
৪) যদি কাজ না হয় তাহলে (Human) SkCef 500 or Sinacef 500 or Lebac 500 ইঞ্জেক্সন তৈরি করে দিনে ২ বার ২ মিলি করে ৫ দিন দিতে হবে বুকের মোটা গোস্তের মধ্যে, মনে রাখতে হবে ইঞ্জেক্সন ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত ফ্রিজে রাখা যাবে।

****টিউমারঃ

বড় লাল রসাল বা শক্ত গোশত পিণ্ড যার মুখ দেখা যাবে না সেটি টিউমার হিসাবে ধরা যেতে পারে। এটি কবুতরের পাখার সন্ধি স্থলে vent ঘাড়ে ইত্যাদি অংশে দেখা যেতে পারে। এটি প্রথমে ছোট থাকে পড়ে বাড়তে থাকে একসময় বড় আকার ধারন করে। vent সন্ধি স্থলে হলে মাদী কবুতর ডিম পারা বন্ধ করে দিতে পারে। বেশী বড় হলে ব্যাথায় কবুতর খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দেয়।

চিকিৎসা ও পরিচর্যাঃ

১) ফোঁড়ার গায়ে নিয়মিত হেক্সিসল/ হেক্সিসল বা হোমিও ক্যালেন্দুলা মাদার বা পালসেটিলা মাদার তুলাতে লাগিয়ে জায়গাটা ভাল করে মুছে দিতে হবে।
২) হোমিও Baryta Curb 200, ১ ফোঁটা করে দিনে ৩-৪ বার ৭ দিন খাওয়াতে হবে।
৩) উন্নত মানের সি+ বি কমপ্লেক্স ভাল কাজ করে প্রতিকারে।
৪) Orasin K তৈরি করে ১ মিলি+ Contrim ১ মিলি +ফ্লাযিল সিরাপ ১ মিলি+স্যালাইন ১ গ্রাম = ৩ মিলি পানিতে মিক্স এভাবে করে দিনে ৩ বার ৪-৫ দিন। আর রাইস স্যালাইন দিতে ভুলবেন না যেন।
৫) যদি কাজ না হয় তাহলে (Human) SkCef 500 or Sinacef 500 or Lebac 500 ইঞ্জেক্সন তৈরি করে দিনে ২ বার ২ মিলি করে ৫ দিন দিতে হবে বুকের মোটা গোস্তের মধ্যে, মনে রাখতে হবে ইঞ্জেক্সন ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত ফ্রিজে রাখা যাবে।

এছাড়াও সাধারন ব্যাথা/মচকানো বা এই ধরনের সমস্যার ক্ষেত্রে কোন প্রকার ঔষধ না দিয়াই ভাল, এটি আপনা আপনি ঠিক হয়ে যায়। তবে সে ক্ষেত্রে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স ও সি দিয়া যেতে পারে। অনেক সময় সাধারন কাঁটা ছেড়া বা এই ধরণের সমস্যাতে অ্যাঁলোভিরার জেল লাগিয়ে দিলে ভাল উপকার পাওয়া যায়। উপরোক্ত যেকোনো সমস্যাতে খেয়াল রাখবেন যেন কবুতর পর্যাপ্ত পরিমান ফ্লুয়িড পায়। কারণ এই ধরনের সমস্যাতে তারা বেশী পরিমান ভিত হয়ে পড়ে ফলে স্ট্রেস বা পানি শূন্যতাতে সমস্যা বেড়ে যেতে পারে। তাই এ ব্যাপারে একটু নজর দিতে হবে। আপনি কত সফল খামারি সেটা নির্ভর করে আপনার সাধারন জ্ঞানের উপর, এ জিনিসটি যদি আপনার কম থাকে তাহলে আপনি হয়ত আপনার অভীষ্ট লক্ষে পৌঁছাতে ব্যর্থ হবেন।

পরিশেষে, “যে বিষয়ে তোমার কোন জ্ঞান নেই, তার পিছনে পড়ো না।” (সূরা বনী ইসরাঈল:আয়াত-৩৬)

লেখক : সোহেল রাবি ভাই