“আল্লাহ এই সমস্ত কিছু এমনিতেই সৃষ্টি করেননি, কিন্তু যথার্থতার সাথে। তিনি প্রকাশ করেন লক্ষণসমূহ সে সমস্ত লোকের জন্য যাদের জ্ঞান আছে।“ (সূরা ইউনুসঃআয়াত-৫)
আমাদের কবুতর সেক্টরে কমপক্ষে ১০% খামারি প্রায়ই এই অভিযোগ করেন যে, ভাই আমি আপনার ছক অনুসরণ করছি কিন্তু কাজ হচ্ছে না বা কোন রোগের উপদেশ নেবার পর জানান যে, আপনার উপদেশে কোন কাজ হচ্ছে না। আর এই ধরনের খামারিদের খামারে ৩৬৫ দিনই কোন না কোন সমস্যা হয়। অনেক সময় চিন্তা করি কেন এ রকম হচ্ছে? কিন্তু পরে এই ভেবে আসস্থ হই যে বাকী ৯০% খামারি যারা আমার কাছ থেকে উপদেশ নেন তারা তো কোন অভিযোগ করেন না। তাহলে সমস্যা কোথায়।
সমস্যা খুজে বের করতে বেশী সময় লাগেনি। প্রথমত, আমাদের খামারিদের মধ্যে খুলে কথা বলার প্রবনতা খুব কম, তারা ভাব বাচ্যে কথা বলতে পছন্দ করেন। অনেক সময় প্রথমে বলবেন যে, আমার কবুতর ঝিমাচ্ছে, অন্য সব কিছু ঠিক আছে। পরে ধীরে ধীরে প্রশ্ন করলে জানা যায় হেন সমস্যা নেই যে ওই কবুতরের নাই। সাধারণত এটি পুরুষ খামারিদের মধ্যে বেশী দেখা যায়। আর সে জন্যই হয়তবা তারা বেশী গ্যাস্ট্রিক/আলসার রোগে ভোগেন। অন্য দিকে মহিলা খামারিরা একটু ভিন্ন। ফলে যখন তারা ফিরে আসে তখন তাদের কেস হিস্ট্রি জানা যায় যে তাদের বিসমিল্লাহ তেই গলদ। তারা কাঁচা পানি দেন, তাদের খামারি যে শর্ত থাকে সেগুলো সঠিক ভাবে পালন করা হয় না। ব্যাপারটা অনেকটা এ রকম যে আপনি কালেমা তে বিশ্বাস স্থাপন করলেন না কিন্তু নামাজ, রোজা, হজ্জ, জাকাত সবই করলেন! তাহলে কি হবে…? কোন লাভ নাই। ফরজের খবর থাকে না সুন্নত ও নফল নিয়ে আমরা টানাটানি করি।
আপনাকে আগে পরিস্কার পরিছন্ন, জীবাণু মুক্ত, কীটপতঙ্গ ও ইঁদুর মুক্ত পরিবেশ দিতে হবে। কারণ এ গুলো কবুতরের রোগ জীবাণুর জন্য বেশী দায়ী। কিন্তু লাখ টাকা খরচ করা হয় কবুতর কিনতে, হাজার টাকা খরচ হয় খামার ও খাঁচা বানাতে! কিন্তু দুঃখজনক যে, এ ক্ষেত্রে একশ টাকা খরচ করতে কেন যেন বাঁধে! পাঁচশ টাকা খরচ করে কবুতরের ঔষধ কিনছেন, কিন্তু পাঁচ টাকা খরচ করে আলাদা একটা সিরিঞ্জ কিনতে ইচ্ছে হয় না। একটা দিয়েই সমস্থ খামারের কবুতরকে ফীডিং করান হয় দিনের পর দিন। অনেক সময় দেখা গেছে, সেই সিরিঞ্জ কাল হয়ে শেওলা পড়ে গেছে, কিন্তু তাতে কি আসে যায়? এটাই হল আমাদের খামারিদের অবস্থা।
যায় হোক আমাদের খামারে কীটপতঙ্গ ও ইঁদুর মুক্ত রাখতে নানা জন নানা মতামত দিতে দেখা যায়। কবুতরের গায়ে পোকা হলে কেউ বলে থাকেন, এরোসল স্প্রে করেন ঠিক হয়ে যাবে, কেউ কবুতরের খামারে এই ধরনের স্প্রে করতে বলেন কীটপতঙ্গ মুক্ত রাখার জন্য বা নানা ধরনের বিষাক্ত পদ্ধতি অনুসরণ করে থাকেন। তাদের জন্য আজ এই পোস্ট। এই পোস্টটি লিখতে Shohan Apurbo ভাই আমাকে উৎসাহিত করেছেন। আল্লাহ্ উনাকে অনেক নেক হায়াত দান করুন সকল কাজে সফলতা দান করুন ও রুটি রুযীতে বরকত দেন। আমীন।
কিভাবে প্রাকৃতিক উপায়ে কবুতর খামারে কীটপতঙ্গ ও ইঁদুর নিয়ন্ত্রণ করা যায় তা এক নজরে দেখে নেইঃ
মশাঃ
“মশা একটা মানুষকে হিজরা বানিয়ে দেয়!” কথাটা কোন এক বক্তব্যে শুনেছিলাম বা বলতে শুনা যায় ‘মশা মারতে কামান দাগা’। কারণ পৃথিবীতে মশা নিয়ে যত আয়োজন বা পেরেশানি সেটা অন্য কোন প্রাণীর ক্ষেত্রে অতটা না। মশার বিরুদ্ধে মানুষ যুদ্ধ ঘোষণা করে, কোন কাজ না হওয়ায় আপোষ মীমাংসার মাধ্যমে সহাবস্থান করে। আপনার রক্ত চক্ষুকে তারা কোন পাত্তা দেয় না। আপনি যত বড়ই কুতুব হন না কেন, আর আপনার যতই ক্ষমতা থাকুক না কেন, এই প্রাণীটির কাছে কেন যেন মানুষ অসহায়। আপনি বাঘ খাঁচাই বন্দি করেন কিন্তু মশা আপনাকে খাঁচাতে বন্দি করে রাখে। আর এই প্রাণীটিকে হত্যা করার জন্য পৃথিবীতে যত কৌশল ও উপাদান আছে অন্য কোন প্রাণীর জন্য আছে কিনা জানা নাই। আমেরিকার একটি রাজ্যে মশার রাজ্য হিসাবে বলা হয়। সেখানে কোন প্রাণী ১-৫ মিনিটের বেশী বেচে থাকতে পারে না। এই প্রাণীটি যে শুধুই রক্ত খায় তা নয়। এর মাধ্যমে আপনার শরীরে রক্তে প্রবেশ করাতে পারে নানা রকম রোগ ব্যাধি।
পুরুষ মশা ৫-৭ দিন পাতা ও ফুলের নির্জাস খেয়ে বেচে থাকে। কিন্তু অপরদিকে স্ত্রী মশা প্রতিকূল পরিবেশে২-৪ সপ্তাহ আর অনুকুল পরিবেশে ৪-৬ মাস পর্যন্ত বাচতে পারে। এরা দেহের ওজনের ৩ গুন বেশী রক্ত খেতে পারে। ময়লা,স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশ ও আলো বাতাস কম, কার্বন ডাই অক্সাইড বেশী এ রকম জায়গায় থাকতে পছন্দ করে। আর এরা পানি ছাড়া বংশ বৃদ্ধি করতে পারে না। মশার প্রধান শত্রু হল বাদুর ও চামচিকা। আগে যদিও মাঝে মাঝে এই প্রাণীটিকে সন্ধ্যার পর আকাশে উড়তে দেখা গেলেও এখন নানা কুসংস্কারের প্রভাবে প্রায় বিলুপ্ত। আধুনিক মশা মারার যত স্প্রে বা রাসায়নিক উপাদান বা কয়েল বা ইলেকট্রিক গুড নাইট বা আই ধরনের যত কিছুই আছে। তাড়া আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে যতই দাবি করুক কোন কাজ হয়না। উপরন্ত এগুলো কবুতরের ও মানুষের শরীরে দীর্ঘস্থায়ি প্রভাব ফেলে, মানুষ যখন বুঝতে পারে তখন অনেক দেরি হয়ে যায় কিছুই করার থাকে না। আমি ও আমার কিছু খামারি এসব ব্যাবহার করে ভুক্তভুগি তাই এগুলো কে এখন আর বলতে চাই না। ধুপ ধুয়া বা এ রকম পুরানো পদ্ধতি আরও মারাত্মক, কিছুদিন আগে নাটোরে এক খামারি এই ব্যাবস্থা করতে গিয়ে তার প্রায় ১০ লাখ টাকার কবুতররের মায়া ত্যাগ করতে হয়েছিল। মশা কবুতর সেক্টরের অন্যতম প্রধান শত্রু। প্রতিবছর মশার আক্রমনে পক্স ও নানা রোগে কবুতরের বাচ্চা সহ অনেক কবুতরে কে প্রান দিতে হয়। ফলে একজন খামারির স্বপ্ন ভঙ্গ হয়। সারা দেশে লাখ লাখ বা কোটি টাকার ক্ষতি হয়। চোখের সামনে তার প্রিয় কবুতরটি তিলে তিলে মারা যায়। কিন্তু বেচারা খামারির কিছুই করার থাকে না। বিশেষ করে এই সব মশা জনিত রোগের প্রাদুর্ভাব হয় শীতকালে বেশী, যদিও সারা বছরই আর যাতনা ভোগ করতে হয় অনেক খামারিকেই। আমার মনে হয় না যে বাংলাদেশের কোন খামারি বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবে না যে তিনি মশার আক্রমনে তার খামারে কোন ক্ষতি হয়নি। আমরা যদি কিছু সাধারন অথচ সহজ প্রাকৃতিক পদ্ধতি গ্রহন করি, তাহলে অনায়াসেই এই ক্ষতিকারক প্রাণীটির হাত থেকে রক্ষা পেতে পারি।
আসুন জেনে নেইঃ-
প্রথম পদ্ধতিঃ
একটা প্লাস্টিক এর সফট ড্রিঙ্ক এর বোতল রঙ্গিন হলে ভাল। একটি পাত্রে লাল চিনির সাথে পানি মিক্স করি পরিমান টা অর্ধেক বোতল পানি ও ২ টেবিল চামচ লাল চিনি যোগ করি। পাউরুটিতে ব্যবহৃত ইস্ট (এটা বাজারে আলাদা ভাবে কিনতে পাওয়া যায়) ১ চা চামচ ইস্ট যোগ করে মিশ্রণটি বোতলে নিয়ে খামারের এক কোনে ঝুলিয়ে রেখে দিলে এর গন্ধে মশা বোতলের ভিতরে প্রবেশ করে মরে পড়ে থাকবে।
দ্বিতীয় পদ্ধতিঃ
রসুন বাঁটা পানির সাথে মিক্স করে ছেকে নিয়ে স্প্রে বোতল এর ভিতরে ভরে স্প্রে করলে ৫-৬ ঘণ্টা খাঁচার বা খামারের মধ্যে মশা থাকবে না। কারণ রসুনের গন্ধ মশা সহ্য করতে পারে না। বা একটা প্লাস্টিক এর ডিব্বাতে রসুন পানি রেখে দিলেও ভাল কাজ হয়।
তৃতীয় পদ্ধতিঃ
একটা আপেল এর উপর কিছু লবঙ্গ গেঁথে দিয়ে বা লেবু অর্ধেক কেটে তার উপর কিছু লবঙ্গ গেঁথে রুমের কোনায় রেখে দিলে কিছুদিনের জন্য মশা ও মাছির হাত থকে রক্ষা পাওয়া যায়। আপেল সিডার ভিনেগার ২-৩ টেবিল চামচ এর সাথে ২ চামচ তরল ডিটারজেন্ট মিক্স করে একটা পাত্রে রেখে দিলে এর সুগন্ধে মশা বা মাছি আকৃষ্ট হয়ে পাত্রে এসে মারা যাবে। মশা/মাছি মারার ইদানিং নানা মেশিন পাওয়া যায় ক্যমিকাল মুক্ত প্রাকৃতিক সেটাও ব্যাবহার করা যেতে পারে।
চতুর্থ পদ্ধতিঃ
লেমন গ্রাস নামে এক ধরনের ফেন্সি ঘাস পাওয়া যায় অনেকেই এগুলো টবে লাগান। এর গন্ধ মশা সহ্য করতে পারে না। অন্যদিকে পুদিনা/তুলসি/নীম/লাউ/অ্যালভিরা/গাঁদা ফুল গাছ খামারে বা বাসাতে রাখলে এরা এর প্রভাবে বা গন্ধে মাছি বা মশা বা কীটপতঙ্গ আসতে পারে না। এগুলো খামারে বা বাসাতে রাখলে এর সৌন্দর্য বৃদ্ধি পাবে ও কাজের কাজ ও হবে। এমনকি এ সব গাছের পাতাও একই কাজে ভাল ফল পাওয়া যায়।
এছাড়াও নেপথলিন/কর্পূর ও দারুচিনির গন্ধ এরা সহ্য করতে পারে না। আর সবচেয়ে ভাল আলো বাতাসের ব্যাবস্থা করা। ট্রে পরিস্কার রাখা যাতে খামারে খারাপ গন্ধ না থাকে।
তেলাপোকাঃ
“অতিকায় হস্তি লোপ পাইয়াছে কিন্তু তেলাপোকা টিকিয়া আছে”-শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এর এ কথাটি যেন সর্ব যুগের সর্ব সময়ের সর্ব কালের এক অমুল্য কথা। কারণ তেলাপোকা এমন একটা প্রাণী যে সময় সময়ের সব সব জায়গাতেই অবস্থান করে। টয়লেটের কমড থেকে শুরু করে, বেসিন, রান্নাঘরের সিঙ্ক, কিচেন ক্যাবিনেট এমন কোন জায়গা পাওয়া যায় না যেখানে এদের আনাগোনা নেই। অনেকেই আছেন যারা সামনে বাঘ আসলে হয়ত লাঠি হাতে তেড়ে যেতে ভয় পাবেন না। কিন্তু এই প্রাণীটিকে দেখলেই কেন যেন ভয়ে চিৎকার চ্যাঁচামেচি শুরু হয়ে যায়। আর এই প্রানিটিকে অনেক মানুষের মত আমিও কেন জানি ভয় পাই। যদিও এর কারণ আছে। ছোট বেলায় আমার বড় বোনকে দেখতাম রূপ চর্চা করতে। আর সেই চর্চা তে কোন কিছুই যেন বাদ পড়ত না। দুধের সড়, হলুদ, মুসুর ডাল বাঁটা, মধু ইত্যাদি আর যে কত কি তার আর নাই বা বললাম। তো একবার এ রকম সে চর্চা করে রাতে ঘুমিয়ে ছিল হাত ভাল করে না ধুয়ে, সকালে উঠে সেই তার চিৎকার চেচামেচি…কি হয়েছে জানা গেল রাতে তেলাপোকা তার হাতের আঙ্গুলের আগার চামড়া গুলো কুরেকুরে খেয়ে ফেলেছে। সেই যে মনে ভয় ঢুকল …আজও সেই ভয় তাড়া করে ফেরে মনের মধ্যে। আমি ও আমার সব ভাইদের। সেই সময় রাতের বেলা খেতে বসে বিদ্যুৎ চলে গেলে ভাইদের মধ্যে ভাতের থালি নিয়ে দৌড়া দৌড়ীর হিড়িক পড়ে যেত কে কার আগে ঘর থেকে পালাবে। আজও তেলে পোকা গায়ে বসলে বা দেখলে গা রি রি করে উঠে ঘেন্না ও ভয়ে। যদিও শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এর কথা শুধু যে তেলাপোকাকেই বুঝিয়েছে তা নয়, ইদানিং কেন যেন, এই প্রাণীটির সাথে কবুতর সেক্টরের কিছু লোকের দারুন মিল পাওয়া যাচ্ছে। যাদের বিচরণ সব জায়গাতেই অবাধে। যাইহোক অন্য এক সময় হয় তা নিয়ে কথা বলা যাবে। এই তেলাপোকাকে কিভাবে নিয়ন্ত্রন করবেন? এই পোস্ট তা লিখার জন্য আমাকে বেশ কিছুদিন ধরে কবুতর সেক্টরের এক শুভাকাঙ্ক্ষী Shohan Apurbo ভাই বার বার তাড়া দিতেছিলেন যেন আমি এ সম্পর্কে একটি পোস্ট লিখি। তাকে আসস্থ করলাম এই বলে যে, এর সাথে আরও কিছু যোগ করে আমি লিখব। তিনি আমাকে তেলাপোকা মারার একটি ভাল পদ্ধতি সম্পর্কে তার নিজস্ব অভিজ্ঞতা শেয়ার করলেন। যদিও এটি উনার মা তার অভিজ্ঞতার আলোকে তাকে উপদেশ দিয়েছিলেন। আর তাতে ভাল কাজ হয়েছিল। তাকে ধন্যবাদ জানাই উৎসাহিত করারা জন্য আর তার মুল্যবান অভিজ্ঞতা শেয়ার করার জন্য ,তারই আলোকে পদ্ধতি নিন্মে পেশ করলামঃ
প্রথম পদ্ধতিঃ
পোড়া তেল, যেটা দিয়ে হোটেলে পুরি, সিঙ্গারা, মোগলাই ইত্যাদি তেলে ভাজা পোড়া করতে করতে এক সময় তেলের রং বদলে গিয়ে কালচে রং এর হয়ে যায়। এই তেল সংগ্রহ করে একটি বাটিতে করে কবুতরের ঘরে যেখানে তেলাপোকা বেশী লুকিয়ে থাকে এবং কবুতর যেন মুখ দিতে না পারে এমন জায়গায় রাখতে হবে । তেল হল তেলাপোকার প্রিয় খাবার। এই তেলের গন্ধে খেতে এসে সব তেলাপোকা এই তলের ভিতর পড়ে মরে থাকবে। এটি একটু ভাল প্রাকৃতিক পদ্ধতি যেটি কোন সংশয় ছাড়াই পালন করা যেতে পারে।
দ্বিতীয় পদ্ধতিঃ
তেজপাতা+শশা কেটে স্লাইস করে বা তার সাথে রসুন এর কোয়া ছিলে যে জায়গায় তেলে পোকার আনাগোনা সেখানে রেখে দিলে এর গন্ধে তেলাপোকারা পালায়।
তৃতীয় পদ্ধতিঃ
কয়েকটি পুদিনা পাতা তেলাপকার চলাচলের জায়গাই বা যে জায়গায় এরা থাকে সেখানে রেখে দিলে এর গন্ধে পালায় বা কিছু পুদিনা পাতা পানিতে হালকা সিদ্ধ করে সেটি যদি স্প্রে করা হয় তাতে ভাল কাজ হয়।
এছাড়াও নেপথলিন/কর্পূর ও দারুচিনির গন্ধ এরা সহ্য করতে পারে না।
মাছিঃ
রোগ বালাই ছড়ানোর জন্য মাছির অবদান অপরিসীম। বিশেষ করে বর্তমানে ডিপথেরিয়ার মত মারাত্মক জীবাণু ঘটিত রোগের জন্য মাছি ও চড়ুই অন্যতম। মাছি আম, মাছ, বা সুগন্ধ আছে এমন খাবারের সন্ধান পেলেই এসে হাজির হয় ভুতের মত, আর বিরক্ত করতে থাকে। একটি মাছির ২ টি যৌগিক চোখ ও প্রতিটি চোখের মধ্যে ৩০০০ থেকে ৬০০০ হাজার ছোট চোখ আছে ফলে এরা বসে থেকেই ডানে,বায়ে, উপর ও নিচের ছবি দেখতে পায়। এদের ২ টি পাখা আছে। একবার রসুলুল্লাহ(সাঃ) কে জানান হল যে, দুধে একটি মাছি পড়েছে। তিনি জানালেন যে, মাছিটিকে পুরোটা ডুবিয়ে ফেলে দিতে। সাহাবীগণ আশ্চর্য হলেন, সেটা বুঝতে পেরে রাসুলুল্লাহ(সাঃ) বললেন যে, মাছির একটি পাখাতে জীবাণু ও অন্যটিতে অ্যান্টি জীবাণু থাকে। আমাদের বিজ্ঞান এতদিন পর সেটি আবিস্কার করেছে। কবুতরের পায়খানার মধ্যে বা খামারে যে জায়গায় ময়লা জমে থাকে সেখানে এর ডিম পারে ও লাভার জন্ম দেয়।
যাই হোক, এই জীবাণু বাহককে নিমুল ও তাড়ানোর কিছু কৌশল আপনাদের অবগতির জন্য দেয়া হলঃ-
১) পুদিনা/তুলসি/নীম/লাউ/অ্যালভিরা/গাঁদা ফুল গাছ খামারে বা বাসাতে রাখলে এরা এর প্রভাবে বা গন্ধে মাছি বা মশা বা কীটপতঙ্গ আসতে পারে না। এগুলো খামারে বা বাসাতে রাখলে এর সৌন্দর্য বৃদ্ধি পাবে ও কাজের কাজ ও হবে। এমনকি এ সব কাছের পাতাও একই কাজে ভাল ফল পাওয়া যায়।
২) তেজপাতা+লবঙ্গ+ইউক্যালিপটাস গাছের পাতা একটা নেট বা মশারির কাপড়ে বেঁধে ঝুলিয়ে রাখলে ভাল উপকার পাওয়া যায়।
৩) একটা আপেল এর উপর কিছু লবঙ্গ গেঁথে দিয়ে বা লেবু অর্ধেক কেটে তার উপর কিছু লবঙ্গ গেঁথে কামারের কোনায় রেখে দিলে কিছুদিনের জন্য মশা ও মাছির হাত থকে রক্ষা পাওয়া যায়।
৪) আপেল সিডার ভিনেগার ২-৩ টেবিল চামচ এর সাথে ২ চামচ তরল ডিটারজেন্ট মিক্স করে একটা পাত্রে রেখে দিলে এর সুগন্ধে আসে বা মাছি আকৃষ্ট হয়ে পাত্রে এসে তাতে পড়ে মারা যাবে।
৫) মশা/মাছি মারার ইদানিং নানা মেশিন পাওয়া যায় ক্যমিকাল যুক্ত না প্রাকৃতিক সেটাও ব্যাবহার করা যেতে পারে।
এছাড়াও নেপথলিন/কর্পূর ও দারুচিনির গন্ধ এরা সহ্য করতে পারে না।
পিঁপড়াঃ
অনেকেই হয়ত রাগের মাথায় কেউকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে বলে থাকেন আরে তোর মত পিঁপড়ার সাথে কি আর লড়াই করবো। তিনি হয়তো তার জ্ঞান থেকেই এ কথা বলে থাকেন। কিন্তু তার যদি গৃহসংক্রান্ত কোন অভিজ্ঞতা থাকতো তাহলে তিনি ভুলেও একথা বলতে পারতেন না। কারণ বলা হয়, আমাদের চিন্তা যেখানে শেষ হয় পিঁপড়ার সেখানে শুরু, যেখানে আমরা যাবার পৌঁছানোর কথা চিন্তাও করতে পারব না সেখানে তারা পৌঁছে যায় অনায়াসে। চিনির বৈয়াম, বিস্কুটের কৌটা, মধুর ডিব্বা বা এই ধরনের জিনিষ আপনি যতোই শক্ত করে লাগান বা যতোয় সেফ জায়গায় রাখেন না কেন, তাদের থেকে বেচে থাকার সুযোগ খুবই কম। আমার মনে হয় কবুতর খামারেও এরা কম যন্ত্রণা দেয় তা নয়। আপনার হয়ত একটা পছন্দের কবুতরের বাচ্চা কালকে ফুটবে বলে আপনি আশা করে আছেন। সেটা যথারীতি ফুটেছেও…! কিন্তু গিয়ে দেখলেন যে সেটাকে পিঁপড়া বাহিনী আনন্দে মেজবান ভোজ উৎসব করছে। তখন আপনার মনের অবস্থা টা কেমন হবে একবার ভেবে দেখেছেন?
আপনি হয়ত তাদের চোদ্দ গুষ্টি উদ্ধার করে ফেলতে পারেন! তাদের টিপে চিপে মাটির সাথে মিশিয়ে ফেলতে পারেন। তাতে আপনার তখন আর কোন লাভ নেই, বরং আপনার যে অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেছে তাতে, তাদের কিছুই আসে যায় না। আর যদি তারা এই খাবারের সন্ধান পেয়ে থাকে তাহলে এর প্রতিরোধ না করলে আবার একই ঘটনা ঘটতে পারে এতে কোন সন্দেহ নাই। এই ছোট্ট বাহিনীর অপূরণীয় ক্ষতি থেকে বেচে থাকার উপায় কি…?
১) সাবান পানি একটা স্প্রে এর মধ্যে ভরে, ওদের বাসা বা কলোনি তে স্প্রে করুন। এতে ওরা কলোনি অন্য জায়গায় সরিয়ে নিবে।
২) শশার ছিলকা বা গোল করে কাটা শশা পিঁপড়া পূর্ণ জায়গায় রেখে দিন দেখবেন কিছুক্ষণের মধ্যেই এলাকা খালি হয়ে গেছে। এর গন্ধ পিঁপড়া একেবারেই সহ্য করতে পারে না। তিতা শশা হলে ভাল। আমার টয়লেটে এ রকম প্রচুর পিঁপড়ার অত্যেচার ছিল। কিন্তু এই ব্যাবস্থা নিবার পর এখন আর নাই। এই পদ্ধতি তে মাছিও বিতারিত হয়।
৩) গোল মরিচ, দারুচিনি, লেবুর রস একটা তুলাতে করে নিয়ে ও কমলার জুস একটা তুলাতে নিয়ে এক জায়গাতে করে যে জায়গায় ওদের কলোনি বা দেয়ালের ফাটা জায়গায় রেখে দিন। দেখবেন ওদের কলোনি নির্মূল হয়ে গেছে।
৪) লবঙ্গ ও রসুন ওদের কলোনি বা দেয়ালের ফাটা জায়গায় রেখে দিন। দেখবেন ওদের কলোনি সরিয়ে নিয়ে এলাকা ছেড়ে দিয়েছে।
৫) খামারে রাতে ডিম লাইট ব্যাবহার করেন রাতের বেলা, বর্ণালি অল্প আলো ওদের কাছে সহ্য হয় না। এতে অনেক উপকার পেতে পারেন।
৬) নেপথলিন/কর্পূর এর গন্ধ এরা সহ্য করতে পারে না। যদিও এগুলো নেপথলিন টক্সিক হিসাবে কাজ করে। তাই এর ব্যাবহারে সতর্ক থাকতে হবে। যদিও আমি আমার খামারে এটি ব্যবহার করে ভাল ফল পেয়েছি। যদিও কর্পূর ভাল ঔষধি হিসাবে কাজ করে। কলেরা রোগে কুসুম গরম পানি যোগে ১ চিমটি কর্পূর খাওয়ালে ভাল ফল পাওয়া যায়। প্রাথমিক চিকিৎসা হিসাবে।
ইঁদুরঃ
ইঁদুর এমন একটা প্রাণী যাকে পাওয়া যায় না এমন কোন জায়গা নেই, সেটা সাধারন কৃষক এর গোলা থেকে শুরু করে শহুরে অট্টালিকায়। এরা যন্ত্রপাতির তার কেটে দেয়, প্রয়োজনীয় কাগজ কেটে নষ্ট করে, খাবার নষ্ট সহ না রোগ বালাই এর অন্যতম কারণ, বেশ কয়েক যুগ আগে ভারতে ইদুরের কারনে মহামারি প্লেগ রোগে অনেক লোকের প্রানহানির হয়েছিল। দেখা গেছে অনেক ধানি জমিতে কৃষক ইদুরের গর্ত খুজে বের করে। আর সেটা খুঁড়ে এক একটা গর্ত থেকে ২-৩ মন পর্যন্ত ধান বের করতে দেখা যায়। শুধু রোগের কারনে নয় ইঁদুর কবুতর পালক খামারিদের জন্য একটি অন্যতম শত্রু। সাল্মনেল্লা রোগ যে শুধু এদের মাধ্যমে ছড়ায় তাই নয়। এরা অনেক সময় বাচ্চা কবুতর গুলোকে খেয়ে ফেলে বা মারাত্মক ভাবে আহত করে থাকে। আজিমপুর কবরস্থান এর কাছে এক খামারে এ রকম নিয়মিত বড় ইঁদুর আক্রমন করত। সেই ইঁদুর গুলো এতই মারাত্মক ছিল যে, বাচ্চা তো দূরের কথা বড় কবুতর গুলোকে কামড়িয়ে প্রতিদিন রক্তাক্ত করে ফেলত। কেউ তাদের মারতে গেলে তাদের ও আক্রমন করত। সেই খামারের কেয়ার টেকার এ রকম ইঁদুর মারতে গিয়ে তার পায়ে কামড় দিয়ে ঘা করে ফেলেছিল। সেই ইঁদুর গুলো মরা লাশ খেয়ে এতই হিংস্র হয়ে গেছিলো যে মানুষ কেও ভয় পেত না। ইঁদুর সাধারণত চটের বস্তা বা খাদ্য শস্য যেখানে থাকে সেখানে যেন কেমন করে তার গন্ধে চলে আসে। আপনি যদি এই প্রাণীটিকে আপনার খামার থেকে বিতারিত করতে না পারেন। তাহলে দুর্ভাগ্য আপনার পিছু ছাড়বে না। আপনি যতই খামার পরিচর্যায় সময় ব্যয় করেন বা যতই সতর্কতা অবলম্বন করে থাকেন কোন লাভ হবে না। তা হলফ করে বলা যায়। ইঁদুর মারা বিষ অনেকেই ব্যাবহার করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন, কিন্তু আমি এক্ষেত্রে দ্বিমত পোষণ করি। কারণ যেহেতু আমরা লাইভ স্টক নিয়ে কাজ করছি তাই সেক্ষেত্রে কোন ভাবে যদি সেই খাবার কবুতরের কাবারে মিশে যায় তাহলে সেটা হবে খুবই খারাপ ও দুঃখ জন্য ঘটনা। তাই আমাদের সেই দিকে না যাওয়ায় সবার জন্য মঙ্গল।
প্রথম পদ্ধতিঃ
ইঁদুরের প্রথম ও প্রাধান শত্রু বিড়াল ও কুকুর। আর এই দুইটি প্রাণীর অভ্যাস হল, বিভিন্ন জায়গায় প্রস্রাব করা। আর যেহেতু এদের প্রস্রাবে প্রচুর ঝাজাল গন্ধ থাকে। ইঁদুর এই গন্ধ কে প্রচণ্ড ভয় পায়। কিন্তু যেহেতু আপনার যে প্রাণীটার কথা বলছি সেটা আবার বিড়ালের পছন্দ না। আর কুকুর যেহেতু সবার পক্ষে পালা সম্ভব না। নাপাকি বা অন্য যে কারনেই হোক। তাই এর পরিবর্তে যদি ক্যমিকাল অ্যামোনিয়া অল্প পরিমান একটা পাত্রে রেখে সেটা খামারের এক কোনায় বা একটা প্লাস্টিক এর বোতলে অ্যামোনিয়া ভরে উপরে ৩-৪ তা ফুটা করে যদি খামারে রেখে দিয়া হয় তাহলে এতে ভাল কাজ করে।
দ্বিতীয় পদ্ধতিঃ
বাজারে বিভিন্ন ধরনের ট্র্যাপ পাওয়া যায়। সেগুলো ব্যাবহার করতে পারেন বা এক ধরনের আঠা পাওয়া যায়। বাজারের মুদি বা হাডওয়ারের দোকানে দাম ১০০ টাকা করে নেয় সেটা একটা ছোট কাথের মধ্যে দিয়ে ইঁদুর চলাচলের জায়গায় রেখে দিলে। সেখানে ইঁদুর আটকিয়ে মারা যায়। এখত্রে আপনি টোপ হিসাবে কোন খাবার ব্যাবহার করতে পারেন। এভাবে আমি প্রায় ৭০-৮০ ইঁদুর মেরেছি।
তৃতীয় পদ্ধতিঃ
মরিচের ঝাল সস, গোল মরিচ গুঁড়া ও ওয়াসাবি নামে এক ধরনের গাছের মূল পাওয়া যায়, যা চাইনিজরা রান্নাতে ব্যাবহার করেন। বিভিন্ন চেইন শপ গুলোতে পাওয়া যায়। এই দুইটা উপাদান এক সাথে মিক্স করে তার উপর ওয়াসাবি একটা পাত্রে রেখে দিলে ইঁদুর খেতে এসে ঝাল এর ঝাঁজে পালায়।
এছাড়াও আপনি যদি একটা নির্দিষ্ট জায়গায় চটের বস্তা রেখে দেন তাহলে সেখানে এরা ঘড় বানায় বা বানাতে পছন্দ করে। সময় মত রাতে চটের বস্তার মুখ বন্ধ করে পানির বালতি পানি পূর্ণ কোন জায়গায় ঢেলে দিলে বাচ্চা সহ মারা যায়।
এই পোস্টের তথ্য গুলো অনলাইন,পত্রিকা, শাওন অপূর্ব ভাই ও নিজের ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে লিখা হয়েছে। এর মাধ্যমে যদি ৩০% খামারিরও উপকার হয় তাহলে নিজেকে সার্থক মনে করব। আশা করব আমরা যারা খামারি আছি তারা তাদের এই ধরনের অভিজ্ঞতা একে অপরের সাথে শেয়ার করতে চেষ্টা করব যে আমি এভাবে উপকার পেয়েছি আপনিও করতে পারেন। সেই ধরনের অভিজ্ঞতা শেয়ার করবেন যেন প্রকৃত ভাবে আরেকজন উপকার পায়। আপনি যদি মনে করেন আপনার কোন কথা বা অভিজ্ঞতা আপনি অন্যকে কেন বলবেন, যেখানে আপনি অনেক কষ্ট করে শিখতে হয়েছে…? হা সেজন্যই শিখাবেন। যাতে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম কে আমাদের মত কষ্ট স্বীকার করতে না হয়,“তারা যেন থাকে দুধে ভাতে।” আর আপনি না শিখালেও যে কোন জিনিস আল্লাহ্ যদি চাহেন তাহলে সেই জ্ঞান অর্জন, অন্যের জন্য কঠিন নাও হতে পারে বা হবে না। কিন্তু আপনি নিজে জ্ঞান গোপনের দায়ে দোষী হয়ে যেতে পারেন। পরিশেষে, কবি কামিনি রায় এর ‘পাছে লোকে কিছু বলে।’ কবিতা থেকে কিছু অংশ তুলে ধরলাম আশা করি কথা গুলো মনে রাখার চেষ্টা করবেন সবাইঃ
“একটি স্নেহের কথা
প্রশমিতে পারে ব্যথা,-
চলে যাই উপেক্ষার ছলে,
পাছে লোকে কিছু বলে।
মহৎ উদ্দেশ্য যবে,
এক সাথে মিলে সবে,
পারি না মিলিতে সেই দলে,
পাছে লোকে কিছু বলে।“
লেখক : সোহেল রাবি ভাই